স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিরাপদ পানি, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতা (ওয়াশ) কার্যক্রম শিশু ও মাতৃমৃত্যু হারের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওয়াশ চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশলের কোনো বিকল্প নেই। বুধবার ঢাকায় আয়োজিত ‘স্বাস্থ্যখাতে ওয়াশ কর্মসূচি: যৌথ পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু), তেরে দাস হোমস ফাউন্ডেশন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, কেয়ার বাংলাদেশ এবং ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ কর্মশালার আয়োজন করে।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ‘বাংলাদেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার এখনই সময়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধু ডাক্তার ও নার্সদের সেবাই নয় বরং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে ওয়াশ কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।’ একটি জাতীয় কৌশলপত্র ও যৌথ পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমানুষের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত ওয়াশ কর্মসূচি প্রদানের লক্ষ্যে বিদ্যমান নীতিমালা পর্যালোচনা করা হবে।’ তিনি এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল হক খান বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবাখাতে ওয়াশ কর্মসূচির গুরুত্ব দিয়ে সরকার সম্প্রতি ৪র্থ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ও উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করা হবে।’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওয়াশ কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, নবজাতককে ধরার আগে মায়েরা যদি হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেন, তাহলে শিশুমৃত্যুর হার ৪৪ শতাংশ কমে যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগীদের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। ওয়াশ সুবিধার অভাব স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকালে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এটা মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে।
অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল ওয়াশ অবকাঠামো এবং সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার সঠিক চর্চার অভাব স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অর্জনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলে কর্মশালায় আশংকা প্রকাশ করা হয়। কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে ওয়াশ কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে আছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অনুপস্থিতি এর অন্যতম কারণ বলে কর্মশালায় অভিমত প্রকাশ করা হয়। কর্মশালায় বক্তারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে ওয়াশ কার্যক্রম সম্পসারিত করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন আখতার, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. কাজী মোস্তফা সারওয়ার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. রাশিদুল হক, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগবেডার এবং টিডিএইচ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তারা সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও ওয়াশ ব্যবস্থাপনা তরান্বিত করার জন্য দ্রুত কর্মপরিকল্পনা তৈরির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
দিনব্যাপী আয়োজিত এ কর্মশালায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দাতা সংস্থা, এনজিও এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।