বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পদকের মেডেল সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন তিনি।
রাবেয়া খাতুন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের মা।
বাংলা সাহিত্যের আলোকিত এ লেখক ছাড়াও ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন: স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব) শামসুল আলম (বীর উত্তম), আশরাফুল আলম, শহীদ মো. নজমুল হক, মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী, শহীদ এনএম নাজমুল আহসান, শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শী, সংস্কৃতিতে অধ্যাপক ড. এনামুল হক ও ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল, সমাজসেবায় খলিল কাজী ওবিই, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে শামসুজ্জামান খান ও অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথ (প্রয়াত) এবং জনপ্রশাসনে প্রফেসর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
এ বছর ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে স্বাধীনতা পদক ২০১৭-তে ভূষিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের একটি পদক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে মামাবাড়িতে জন্ম হয় রাবেয়া খাতুনের। অবশ্য তার পিতার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম নিরাশ্রয়া এখনো অপ্রকাশিত। বিদায় ও অশোক রেবা উপন্যাস দু’টিও অপকাশিত গ্রন্থ।
রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মেঘের পরে মেঘ’ এবং ২০১১ সালে তার আরেকটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মধুমতি’ অবলম্বনে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী একই শিরোনামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মধুমতি’। এছাড়াও অভিনেত্রী মৌসুমী ২০০৩ সালে তার লেখা ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অবলম্বনে একই শিরোনামে নির্মাণ করেন একটি চলচ্চিত্র।
লেখালেখির পাশাপাশি রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতাও করেছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার। জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুড়ি’র বিচারক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মধুমতী, সাহেব বাজার, অনন্ত অন্বেষা, রাজারবাগ শালিমারবাগ, মন এক শ্বেত কপোতী, ফেরারী সূর্য, অনেকজনের একজন, জীবনের আর এক নাম, দিবস রজনী, সেই এক বসন্তে, মোহর আলী, নীল নিশীথ, বায়ান্ন গলির একগলি, পাখি সব করে রব, নয়না লেকে রূপবান দুপুর, মিড সামারে, ই ভরা বাদর মাহ ভাদর, সে এবং যাবতীয়, হানিফের ঘোড়া, হিরণ দাহ, মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র, এই বিরল কাল, হোটেল গ্রীন বাটন, চাঁদের ফোটা, নির্বাচিত প্রেমের উপন্যাস, বাগানের নাম মালনিছড়া, প্রিয় গুলসানা, বসন্ত ভিলা, ছায়া রমণী, সৌন্দর্য সংবাদ, হৃদয়ের কাছের বিষয়, ঘাতক রাত্রি, শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, মালিনীর দুপুর, রঙিন কাচের জানালা, মেঘের পর মেঘ, যা কিছু অপ্রত্যাশিত, দূরে বৃষ্টি, সাকিন ও মায়াতরু, রমনা পার্কের পাঁচবন্ধু, শুধু তোমার জন্য, ঠিকানা বি এইচ টাওয়ার, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, প্রথম বধ্যভূমি, কমলিকা, দশটি উপন্যাস, শঙ্খ সকাল প্রকৃতি, যা হয়না, আকাশে এখনো অনেক রাত, উপন্যাস সমগ্র, স্বনিবার্চিত উপন্যাস, জাগতিক, স্বপ্নে সংক্রামিত, ও কে ছিল, মহা প্রলয়ের পর, নির্বাচিত উপন্যাস, শহরের শেষ বাড়ি, নষ্ট জ্যোস্নার আলো, মাইগো, সমুদ্রবণ ও প্রণয় পুরুষ, এই দাহ এবং রাইমা ইত্যাদি।