দ্য ইকোনমিস্ট: আপনি বলেছিলেন যে, সৌদি আরবের অর্থনীতির বহুমুখী চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো তেল থেকে দূরে সরে যাওয়া। এর বিপরীতে কোন খাত অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে করেন?
সালমান: তেলখনি খাতে ভর্তুকি প্রক্রিয়ায় সংস্কার দরকার। মাত্র ২০ ভাগ মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারি ভর্তুকি থেকে উপকার পায়। আমাদের লক্ষ্য ৮০ শতাংশ মানুষ এবং আমরা তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। তারা যথেষ্ট রাজস্ব প্রদান করে। যা আমি আপনাকে আগে বলেছিলাম, অব্যবহৃত সম্পদ, যেমন ধর্মকেন্দ্রিক পর্যটন প্রসারিত করা, যেমন মক্কা ও মদিনায় পর্যটক সংখ্যা এবং তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে উভয় শহরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
: এবারের বাজেটে আপনি অনেক কিছুর দাম বাড়িয়েছেন করেছেন, কিন্তু বিদ্যুৎ, পেট্রোলে কিন্তু এখনও অনেক ভর্তুকি দিয়ে চলেছেন। সব কিছুর উপর থেকে ভর্তুকি সম্পূর্ণরূপে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি?
: জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা মুক্ত বাজারে পৌঁছাতে চাই, কিন্তু কম আয়ের মানুষদের জন্য কিছু ভর্তুকি কর্মসূচি চালু রয়েছে। শুধু জ্বালানির দাম কমানোর মধ্য দিয়ে নয়, বরং নানাভাবে আমরা এই ভর্তুকি সমন্বয় করি। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ নিয়ে কাজ করছি, যেমন: উমুলুজ ও উজ শহরের কাছে আমাদের উত্তর জেদ্দায় একটি অসাধারণ এলাকা রয়েছে, সেখানে প্রায় ১০০টি প্রবাল দ্বীপ রয়েছে। এসব স্থানের তাপমাত্রাও আদর্শ, জেদ্দার থেকে পাঁচ থেকে সাত ডিগ্রী ঠাণ্ডা। এটা অনাবাদি জমি, আমি সেখানে শেষ আটটি ছুটি কাটিয়েছি। আমি সৌদি আরবে এইরকম দুর্লভ ভূখন্ডের সন্ধান পেয়ে বিমোহিত হয়েছি, এবং এই ভূখণ্ডটি সংরক্ষণ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৩০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২০০ কিলোমিটার।
এটি এমন এক দুর্লভ সম্পদ যা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় রাজস্ব তহবিলের বাইরে অনেক বেশি সম্পদের যোগান দিতে পারে। আমাদের এমন আরও অনেক অব্যবহৃত সম্পদ রয়েছে মক্কা, মদিনার গ্রামাঞ্চলে ও শহর এলাকায়। উদাহরণ হিসেবে জেদ্দার কথা বলা যেতে পারে। এর আয়তন প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বর্গ মিটার, সমুদ্র সৈকতের ঠিক সামনে, জেদ্দার প্রাণকেন্দ্রে। এটি বর্তমানে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী দ্বারা পরিচালিত। শুধু এই জমির বাজার মূল্যই প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। সমস্ত কাঠামো এবং ভবন স্থানান্তর বাবাদ এখানে ব্যয় হবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এটি অব্যবহৃত থাকা নিঃসন্দেহে একটি বড় অপচয়।
অব্যবহৃত সম্পদ ব্যবহার করে মুনাফা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি করবে, এই বিশাল কাজ শুরু করার কথা আমরা বলছি। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য নতুন সম্পদ যোগ করতে পারব।
: এসব সম্পদ কি আপনি বেসরকারিকরণ করবেন? এ জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে হবে, এগুলো প্রকল্পে পরিণত করতে হবে, কোম্পানিতে রূপায়িত করার ব্যাপার আছে, এবং তারপর পাবলিক আইপিওতে পরিণত করতে হবে, এটা কি সৌদি আরবের ‘মিথ্যাচার বিপ্লব’?
: অবশ্যই। আমাদের অনেক অব্যবহৃত অমূল্য সম্পদ আছে এবং আমাদের কাছেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যা খুব দ্রুত সম্প্রসারণ করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, পানির ক্ষেত্রে আমরা দরিদ্রতম দেশগুলির অন্যতম। আমাদেরই একটি ডেইরি কোম্পানি সৌদি আরবের অনেক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি, যার ওমানের বাজারে যাদের ৮০% শেয়ার রয়েছে। কুয়েতি বাজারে তাদের শেয়ার শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি।
৪০ ভাগেরও বেশি শেয়ার রয়েছে আমিরাতের বাজারে। মিশরে, যেখানে নীল নদ রয়েছে, সেখানেও তাদের শতকরা ১০ ভাগ শেয়ার রয়েছে। এটা তো গেল একটা কোম্পানির কথা। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন দুগ্ধ, ও কৃষি কোম্পানি রয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরেও একই সম্ভাবনা রয়েছে। খনি খাত, তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল সেক্টরসহ আরও অনেক বিশাল সম্ভাবনাময় খাত বিকশিত হবার প্রবল সুযোগ আছে।
: এজন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ অন্তত ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এই টাকা কোত্থেকে আসবে?
: এই হিসেবটা সৌদি সরকারের নয়, ম্যাকিনসে নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী এবং কিছু ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়ার চেষ্টা করছি। যাহোক, ম্যাকিনসের সঙ্গে আমাদের সরকারের অনেক যৌথ গবেষণা রয়েছে।
বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা সম্ভাব্য বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করব। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি বিনিয়োগকারী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তহবিল, জিসিসি (উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ) তহবিল এবং আন্তর্জাতিক তহবিল।
: কেন একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী এখন সৌদি আরবে বিনিয়োগ করবেন?
: এটা লাভের প্রশ্ন। এবং এই লাভের সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আমরা বিনিয়োগবান্ধব নিয়ম-নীতি তৈরি করছি যাতে তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরব নতুন কোনো দেশ নয়। ইতোমধ্যে সৌদি বাজারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান বোয়িং, এয়ারবাস, জিই, জিএম, সোনি, সিমেন্সসহ প্রায় প্রতিটি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। পৃথিবীর নামকরা সব ব্যাংকের শাখাও সৌদিতে রয়েছে। কাজেই আমিই প্রথম সৌদি আরবে বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করছি না, বরং যে দ্বার ইতিমধ্যেই খোলা রয়েছে, সেটাকে আরও সুগম করছি মাত্র।
: একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা এখনও আলোচনা করিনি তা হলো সৌদি যুবজনগোষ্ঠীর সংখ্যা: আপনার দেশের জনসংখ্যার ৭০ ভাগের বয়স বয়স ৩০ বছরের নিচে। আপনি এই বিপুল যুব-জনগোষ্ঠীর জন্য কিভাবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবেন?
: বেসরকারি খাতে আমাদের চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে। খনি খাতে কর্মসংস্থানের একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করবে, হজ করতে আসা তীর্থযাত্রীদেরকে সহায়তার যে কর্মসূচি, সেটিও অনেক কর্মসংস্থান ঘটাবে। নতুন বিনিয়োগও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। আমরা মনে করি, আমাদের বেকারত্ব না বেড়ে বরং পরবর্তী কয়েক বছরে তা কমবে এবং দেশের জন্য একটি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
তাছাড়া আমাদের দেশে এখন প্রায় দশ বিলিয়ন বিদেশি শ্রমিক চাকরির বাজার দখল করে আছে। প্রয়োজন হলে এই পদগুলোও আমি সৌদি নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারি। যদিও আমি এজন্য বেসরকারি খাতকে চাপ প্রয়োগ করতে চাই না। তবে এটা শেষ অবলম্বন হতে পারে।
: আপনি বিদেশিদের নিয়োগে বাধা দেবেন?
: আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি, যদি আমরা সবদিক সামাল দিয়ে উঠতে পারি তাহলে তার দরকার হবে না। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হলে বেসরকারি খাতের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বাধ্য হব। যেমনটি করা হয়েছিল, ‘সৌদিকরণ কর্মসূচি’র সময়।
: আপনার বর্ণনা মতে, আপনি বেশ কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছেন, যেমন-তেল-বহির্ভূত খাতে রাজস্ব সূচনা, ভর্তুকি হ্রাস, বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদি। এসব অনেকগুলো উপায়ে সৌদি অর্থনীতি এবং বিরাজমান সৌদি সামাজিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনের এক নতুন প্রস্তাব। এই ব্যাপক পরিবর্তন কী অতি রক্ষণশীল সৌদি সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করবে না?
: এটা সব কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর ফলে সব কিছু বদলে যাবে এমনও নয়। আমাদের নিজস্ব কিছু ব্যাপার রয়েছে যা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ; এটা আমাদের কাছে যেমন মত প্রকাশের স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ, পাশাপাশি মানবাধিকারের জন্য আমাদের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সৌদি সমাজে নিজস্ব কিছু সমস্যা, মূল্যবোধ এবং নীতিমালা রয়েছে এবং আমরা আমাদের নিজস্ব চাহিদা অনুসারে উন্নতি লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
৫০ বছর আগের পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি মোটেও এক নয়। পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের একটি সরকার পরিচালন ব্যবস্থা পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের সক্রিয় সংসদ আছে, সংসদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর প্রতিনিধিত্ব আছে, নারীরা ভোট দিতে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। আজ আমরা অগ্রগতি করছি আমাদের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী, আমাদের নিজস্ব গতি অনুযায়ী, এবং এটা অন্য কোনো মডেলের প্রতিক্রিয়া হিসাবে নয় ।
: কিন্তু আপনি কি বিশ্বাস করেন যে অধিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া আরও করারোপ করতে পারবেন?
: না, কোনো করারোপ হবে না।
: কিন্তু আপনি কর প্রবর্তন করছেন।
: আমরা করের বিভিন্ন ধরণ নিয়ে কথা বলছি, আমরা ভ্যাট সম্পর্কে কথা বলছি, এটি কোনো মৌলিক পণ্যসামগ্রীতে প্রয়োগ করা হবে না; এটি আনুষাঙ্গিক হতে হবে। ভ্যাট মৌলিক পণ্যের উপর হবে না। যেমন পানি, ডেইরি, দুধ ইত্যাদি।
: তাহলে এসব পণ্য ভ্যাটের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হবে?
: কোনো সন্দেহ নেই, এর দ্বারা মূল্য প্রভাবিত হয়।
: আচ্ছা! কিন্তু প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো ছাড়া এ ধরনের করারোপ করতে পারবেন?
: আবারও বলছি, একটি বিষয়ের সঙ্গে অপরটি সম্পর্কিত নয়। এটি জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত। জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন সরকারের সিদ্ধান্ত। সংস্কারমূলক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আমরা অনেক আলাপআলোচনা ও কর্মশালা করি। এতে অনেক মানুষ প্রতিনিধিত্ব করে ও মতামত দেয়।
: বৃহত্তর সামাজিক সংস্কার সম্পর্কে আপনার ভাবনা কি? আপনি কীভাবে একটি সমৃদ্ধ আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করবেন, যেখানে একটি উজ্জ্বল পর্যটন শিল্প থাকবে, উন্নত স্বাস্থ্য-পরিচর্যাকেন্দ্র থাকবে, আধুনিক শিক্ষা কেন্দ্র থাকবে, যদি না সেখানে নারীরা অনুমতি ছাড়া গাড়ি চালাতে না পারে, অবাধে চলাফেরা করতে পারে?
: নারীরা এখন অবাধে চলাচল করতে পারেন। তারা ব্যবসা খাতে কাজ করছেন।
: কিন্তু এজন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিতে হয়।
: এটা ভিন্ন বিষয়। যখন আপনি অনুমতি নিয়ে কথা বলছেন, তখন আপনি এমন নারীদের কথা বলছেন যারা একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছায়নি। যারা নিজেদের দায়িত্ব নিতে এখনও সক্ষম হয়নি। এর সঙ্গে নিজস্ব একটি সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতির ব্যাপার আছে। এর কিছু জিনিস আমরা পরিবর্তন করতে পারি। আবার কিছু জিনিস চাইলেও বদলাতে পারি না। কিন্তু আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি যে সৌদি নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বা এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।
: তাহলে সৌদি আরবের নারীকর্মীর হার মাত্র ১৮% কেন, যা পৃথিবী সর্বনিম্ন হারের একটি?
: সৌদি আরবের সংস্কৃতিতে নারীদের অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের রেওয়াজ নেই। অর্থনৈতিক কাজে নারীদের অংশগ্রহণে আগ্রহী করে তুলতে আরও সময় প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি নারীদের একটি বড় অংশ বাড়িতে সময় কাটায়। কর্মজীবী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারা এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। এর জন্য সময় প্রয়োজন।
: আপনি কি মনে করেন যে সৌদি আরবের নারীদের বেশিরভাগ যদি শ্রমবাজারে যুক্ত হয়, তাহলে সৌদি আরবের জন্য ভালো হবে?
: এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক বড় হাতিয়ারগুলোই অব্যবহৃত। এবং আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ভীতিকর অবস্থানে পৌঁছে গেছে। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ এই উভয় সমস্যা মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
: যাদের বয়স ত্রিশ বা তার চেয়ে কম সেই ৭০% সৌদি নাগরিকের একজন হচ্ছেন আপনি। আপনার হাতে রয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, আপনি নানাভাবে সৌদি আরবের নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। আসলে আপনি কোন ধরনের সৌদি আরব নির্মাণ করতে চান?
: আমি, একইসঙ্গে ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠী সেই সৌদি আরব চায়, যেটি তেলের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ হবে না। যেটি হবে ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী অর্থনীতির একটি সৌদি আরব; স্বচ্ছ আইনের সৌদি আরব; যার বিশ্বের বুকে খুব শক্তিশালী অবস্থান থাকবে। যেখানে যে কোনো নাগরিকের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের সুযোগ থাকবে, বিকশিত হওয়ার মতো ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
টেকসই একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া চালু থাকবে যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। যে সৌদি আরব বিশ্বের বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদন ও যোগানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং বিশ্ব যে সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন সেগুলো মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সৌদি আরবের একজন যুবক হিসেবে আমার এবং সৌদি আরবের অন্যান্য মানুষের অনেক স্বপ্ন আছে, সেসব স্বপ্ন সমন্বয় ও বোঝাপোড়ার মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাব একটি উন্নত সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাব।
: আপনি সৌদি আরবের জন্য খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, যদিও আমরা একটি বিপজ্জনক সময়ে বসবাস করছি, বিশেষ করে এ অঞ্চলে অনেক বছর ধরে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরস্পরবিরোধী এই দুই সত্যকে অর্থাৎ স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে আপনি কীভাবে মেলাবেন?
: আপনি ব্রিটেন থেকে এসেছেন, এবং আমি চার্চিলের একজন অনুরাগী। চার্চিল বলেছিলেন, সংকটের সময়ই সুযোগ আসে। যখনই আমি কঠিন পরিস্থিতি বা আঞ্চলিক সংকট দেখি তখনই আমি চার্চিলের ওই উক্তিটি মনে করি। আমি এ অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ বা সংকটকে এভাবেই দেখি।
: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পর এই অঞ্চলের সঙ্কট কি আরও জটিল হয়ে উঠেছে?
: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করতে চেয়েছে, সেটা আমরা বুঝি। আমেরিকা নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সংকট নিরসনে সব ধরনের মার্কিন উদ্যোগকে আমরা সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। আমরা নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা করি। আমার কাছে মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কাজটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও মহৎ। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে তারা বিশ্বের এক নম্বর এবং সে অনুযায়ী তাদের আচরণ করা উচিত।
: তারা কি যথযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না?
: আমরা উদ্বিগ্ন যে এখনও অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছুই ঘটতে পারে।
: আপনি কি তাদের কারণে হতাশ?
: আমরা বুঝি। আমরা উপলব্ধি করি যে, আমরাও তাদের যে সমস্যা সেই সমস্যার অংশ এবং আমরা সচেষ্ট থেকেছি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের উপর চাপিয়ে না দিতে। আমরা আমাদের বিষয়গুলো তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিতে পারিনি। তবে আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এর পরিবর্তন হবে।
: সৌদি আরব কি এই অঞ্চলে নতুন ধরনের নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে?
: এই অঞ্চলে আমরা মিত্রদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। আমরা সবাই মিলে আঞ্চলিক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করছি। আমরা এবং উপসাগরীয় সহযোগী সংস্থা (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল-জিসিসি)-ভুক্ত দেশ, মিশর, তুরস্ক, সুদান, মধ্য আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকার দেশ, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ, পূর্ব এশীয় দেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি ও পাকিস্তান।
আমরা সম্মিলিতভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চেষ্টা করছি। কারণ এই চ্যালেঞ্জগুলি আমাদের সকলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সম্মিলিতভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে। আমরা ইতিবাচক উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।
: পাঁচ বছর আগে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলো। পরের পাঁচ বছর কেমন হবে বলে মনে করেন, ভালো বা খারাপ?
: আমরা উপলব্ধি করেছি যে, আমরা এমন একটি সমস্যার অংশ যেটা নিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তাদের উপর চাপিয়ে দিইনি। আমাদের যুক্তিগুলো তাদের পৌঁছানোর যথাযথ প্রচেষ্টার যথেষ্ট অভাব ছিল। আরব বসন্তটি ছিল একটি প্রকৃত পরীক্ষা, কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকবে না নমনীয় সরকার থাকবে?
জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার থাকবে, নাকি যা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না এমন সরকার থাকবে। আরব বসন্তে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না-এমন শাসকদের পতন হয়েছে। অন্যান্য শাসনব্যবস্থার পরিণতিও আমরা দেখেছি।
: সৌদি রাজ পরিবার কি সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে?
: আমরা একটি জাতীয় প্রক্রিয়ার অংশ; আমরা স্থানীয় উপজাতি, দেশের অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেব গত তিনশ’ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করছি।
: সম্মানিত যুবরাজ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
: আপনাকেও ধন্যবাদ। এখানে আসার জন্য এবং প্রশ্নগুলো করার জন্য আমি আনন্দিত। আমরা সব সময় বন্ধুদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করি। আমরা যদি ভুল করি তবে আমাদের শুনতে হবে যে আমরা ভুল। কিন্তু যদি আমরা ভুল না করি, তাহলে আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন আশা করি। আমি সবাইকেই অনুরোধ করব আপনি যা বিশ্বাস করেন, তা অকপটে বলার জন্য। আমরা তা সব সময়ই করি। আবারও ধন্যবাদ।
সহযোগিতায়: ইসরাত বিনতে ওয়াহিদ, গবেষক, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স-এর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ থেকে এমএসসি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)