চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সেনা মোতায়েন প্রশ্নে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নানা মত

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও না ভোট প্রশ্নে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। তবে নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ নারী সদস্যকে যেন মনোনয়ন দেওয়া হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন তারা।

বুধবার কমিশনের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সংলাপে অন্যান্য প্রস্তাবের সঙ্গে এ প্রস্তাবটিও সাংবাদিকরা দেন বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নেতাসহ মোট ২৬ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সকাল দশটার কিছু পরে শুরু হওয়া এ সংলাপ চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এরপর সংলাপের সার সংক্ষেপ তুলে ধরে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করেন ইসি সচিব।

ইসি সচিবের বক্তব্য এবং কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে সংলাপ বিষয়ে জানা যায়; সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে ইসিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন প্রায় সব জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

তবে সেনা মোতায়েন ও না ভোটের বিধান রাখার প্রশ্নে দুই ধরনের মতই এসেছে তাদের কাছ থেকে। কেউ বলেছেন সেনা প্রয়োজন, কেউ বলেছেন সিভিল প্রশাসনের কাজে সামরিক বাহিনীকে না আনাই ভালো। আবার কেউ বা বলেছেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, আরও যেসব প্রস্তাব ও পরামর্শ এসেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন, গণপ্রতিনিধিত্ব অাদেশ-আরপিও সংশোধন এবং তা বাংলায় তর্জমা করে প্রকাশ, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

এছাড়াও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে ধর্মের ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।

নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশী শক্তিমুক্ত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রার্থীদের হলফনামা জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন সাংবাদিকরা। প্রার্থীরা যাতে অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন সে ব্যাপারেও পরামর্শ আসে তাদের কাছ থেকে।

ইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি কমিশনকে। তবে জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সমর্থন করি না আমি। সেই সঙ্গে বলেছি; নাম সর্বস্ব পর্যবেক্ষক সংস্থাকে যেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া হয়।

বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, জাতীয় নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সেখানে সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইসিকে দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।

সেনা মোতায়েন প্রশ্নে  এ সাংবাদিক নেতা বলেন, নির্বাচন সিভিল প্রশাসনের কাজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ কাজে সামরিক বাহিনীকে মোতায়েন না করাই ভালো।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুলউল্লাহ অবশ্য সেনা মোতায়েন প্রশ্নে ইতিবাচক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনী সুনামের সঙ্গে দেশে-বিদেশে কাজ করছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আমরা তাদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারি।

সার্বিকভাবে আলোচনার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সবার প্রস্তাব ও পরামর্শগুলোর সারাংশ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশনই নেবে।

সংলাপের চূড়ান্ত সফলতা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করে উল্লেখ করে হেলালুদ্দীন আহমদ আশা প্রকাশ করেন- রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা আস্থায় আনতে পারবেন।

সংলাপে অংশ নিলেন যারা:
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের প্রথম ধাপে বুধবার আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রিন্ট মিডিয়া ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিলিয়ে মোট ৩৭ জনকে। তাদের মধ্যে এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন ১২ জন।

যারা সংলাপে অংশ নিয়েছেন তারা হলেন- নূরুল কবীর, সাইফুল আলম, আশিস সৈকত, মোস্তফা কামাল, মতিউর রহমান চৌধুরী, খন্দকার মুনীরুজ্জামান, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, আনিস আলমগীর, মো. শফিকুর রহমান, ফরিদা ইয়াসমিন, সামশুল হক, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, মো. আব্দুল্লাহ, মাহফুজউল্লাহ, কাজী সিরাজ, আনিসুল হক, আমানুল্লাহ কবীর, গোলাম মর্তুজা, বিভুরঞ্জন সরকার, মাহবুব কামাল, সোহরাব হাসান, কাজী রোকনুদ্দীন আহমদ (ইসির তালিকার ক্রমানুসারে)।

 

বৃহস্পতিবারের সংলাপে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও এজেন্সির প্রধান সম্পাদক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিওর বার্তা প্রধানসহ ৩৪ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।