আসেম সম্মেলনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একজন রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট।
সু চি’র ভাষণে গত আগস্ট থেকে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সোমবার দেয়া ওই বক্তব্যে অং সান সু চি বলেন, অবৈধ অভিবাসনের জন্য সারা বিশ্বই নতুন নতুন হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে এবং সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। তার এমন মন্তব্যের পরেই সবাই সমালোচনা করে যে, সু চি রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে মনোযোগ সরাতেই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
নাইপিদোতে অনুষ্ঠিত ১৩ তম আসেম সম্মেলনে অং সান সু চি বলেছেন, এখন আমরা বৈশ্বির অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার নতুন নতুন ধাপের মুখোমুখি হচ্ছি। সারাবিশ্বে চলমান সংঘর্ষগুলো নতুন নতুন হুমকি ও জরুরি অবস্থার তৈরি করছে। অবৈধ অভিবাসন সারাবিশ্বে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার, সহিংস উগ্রপন্থা এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধেরও হুমকি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানি নির্ভর এক রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট রো নাই সান লুইন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, সু চি’র এমন বক্তব্য রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
আল-জাজিরাকে লুইন বলেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নাগরিকত্ব পেয়েছিলো। ১৯৮২ সালের পরে সেনাশাসন জারি হওয়ায় আবার সেই নাগরিকত্ব হারায় তারা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বছরের পর বছর রোহিঙ্গারা বৈষম্যর শিকার হয়ে যাচ্ছে। তারপর থেকে বারবার চেয়েও আর নাগরিকত্ব পায়নি তারা।
১৯৮৮ সালে যখন সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখনও রোহিঙ্গারা তাকে সমর্থন দেয়। এনএলডি আইডিও ইস্যু করেন যেখানে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটা লেখা। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সু চির দল যখন সংসদীয় নির্বাচনে দাঁড়ায় তখন তার টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে চার রোহিঙ্গা।
আল-জাজিরার কক্সবাজার প্রতিনিধি তানভীর চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের নেত্রীর এই মন্তব্য ‘গণনা করা পদক্ষেপ’। তিনি মূল আলোচনা রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট ও জাতিগত নিধন থেকে সরিয়ে অভিবাসন ও সন্ত্রাসবাদের সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো যোগ করেন, তিনি সেনাদের খুশি রাখার চেষ্টা করছে যারা বর্ডার, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে।
অগাস্টে মিয়ানমারে সেনা হামলার কারণে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। যেটাকে জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে।