চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিয়ামের প্রাচীন ইতিহাস

মাহে রমজান রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মাস। মহান আল্লাহপাক এই মাসে সিয়াম পালন করা মুসলমানদের ওপর ফরজ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’

সিয়াম পালনের মূল উদেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। আর তাকওয়ার বৈশিষ্ট সর্বযুগের সর্বকালের  ইমানদার-মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য বিষয়। সে কারণেই সিয়াম সকল নবী ও রসূলদের যুগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই আয়াতে সিয়ামের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা প্রদান করেছেন।

হযরত মুসা (আ.)–এর উম্মত আশুরার সিয়াম পালন করতেন। একদিন পর পর হযরত দাউদ (আ.) সিয়াম পালন করতেন মর্মে সহি বুখারী শরীফে পাওয়া যায়। হযরত ঈসা (আ.) উম্মতের ​ওপর পুরো রমজান মাসে সিয়াম পালন করা অপরিহার্য ছিল, এ মর্মেও নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণিত রয়েছে। এভাবে প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের সিয়াম পালন অনেক নবীর যুগেই কর্তব্য বলে নির্ধারিত ছিল।

মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক

হযরত মুসা (আ.) তাওরাত গ্রহণ করা জন্য নির্জন ইমাদতের মানসে তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ৩০ দিন কাটিয়ে ছিলেন। এ ৩০ দিনই তিনি সিয়াম পালন করেছিলেন। সিয়াম পালনকালে হযরত মুসা (আ.)–এর মুখের তারল্য মহান আল্লাহর কাছে মেশক’র মত সুগন্ধ লেগেছে, তাই আল্লাহ হযরত মুসা (আ.)–কে আরও ১০ দিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশেষে একটানা ৪০ দিন সিয়াম পালন শেষে হযরত মুসা (আ.) মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসমানীগ্রন্থ ‘তাওরাত’ লাভ করেন।

সিয়াম পালনকারীর মুখের তরল লালা মাহান আল্লাহর কাছে মেশক–এর চেয়েও বেশি সুগন্ধময়। হযরত মুসা (আ.)–কে তাওরাত প্রদানের মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, সিয়াম পালনের পর পুরস্কার হিসেবে বান্দার জন্য অপার নেয়ামত রেখেছেন। যেমন পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘চক্ষু শীতলকারী মহা প্রতিদান তাদের জন্য গোপন রাখা হয়েছে তা কোনো আত্মাই জানে না।’

আসলেই ঈমানদারের জন্য সিয়াম পালন বিশাল নেয়ামত। এটি বিশেষায়িত ইবাদতও বটে। যার সাথে অন্য ইবাদতের ভিন্নতা আছে এবং সেই ভিন্নতার কারণেই তার প্রতিদানও ভিন্নতর ঘোষণা এসেছে মহান আল্লাহর তরফ থেকে। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘সিয়াম আমার জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।’ সিয়ামকে আল্লাহ নিজের জন্য বলে যা বুঝাতে চেয়েছেন, তার ব্যাখ্যাও হাদীসে আছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমার ভয়ে যে আহার্য পরিত্যাগ করে আমার ভয়েই যে স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকে; আমাকে পাওয়ার আশায় সিয়ামে মজাদার লোভনীয় খাদ্যদ্রব্য ছেড়ে দেয়।’ এখানে সিয়াম পালনের তাত্ত্বিক দৃষ্টি ভঙ্গির বর্ণনা করা হয়েছে। আসলে বৈশিষ্টের দিক থেকে, পুরস্কার ও প্রতিদানের দিক থেকে, সময়ের দিক থেকে সিয়াম পালন এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে আলোকিত এক সাধনা, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার বান্দার গুনাহ মোচন করে জান্নাতে প্রবেশের উপযোগী করে তোলেন। যুগে যুগে আল্লাহ তা’আলার বান্দাদের এটা অত্যন্ত প্রিয় ইবাদত ছিল। শুধু মাহে রমজানের সিয়াম নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য প্রাওয়া বান্দাগণ প্রায় সারা বছর জুড়ে নফল সিয়াম পালন করতেন।

মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের সিয়াম পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা