সিলেট, মৌলভীবাজার এরপর কুমিল্লা। জঙ্গিদের হিংস্র থাবা যেনো থামছেই না, একের পর এক বেরিয়ে আসছে সেই থাবার চিহ্ন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশপাশি দেশবাসীও যেন হাঁপিয়ে উঠেছে।
সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ বলছে, যেকোনো মূল্যে জঙ্গিদের নির্মূল করা হবে। ইতোমধ্যে সফলভাবে দেশের ইতিহাসের সব থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষ করেছে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ফোর্স।
সেই অপারেশনের রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাট এলাকায় দুটি এবং কুমিল্লার গন্ধমতি এলাকায় আরেকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। এসব বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে নাসিরপুরে সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ শুরু করেছে। আর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অসুবিধার কথা ভেবে শুক্রবার কুমিল্লার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালোনো হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এক নারীসহ দক্ষ চার জঙ্গি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহল নামের বাড়ির নিচতলায় অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ। এরপরদিন ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট সেখানে গিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোজিম ইউনিটের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানায়। বার বার চেষ্টা করার পরেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করলে অপারেশন স্প্রিং রেইন শুরু করতে চায় তারা। কিন্তু জঙ্গিদের দক্ষতা ও বাড়ির ভিতরে প্রচুর বিস্ফোরক এবং সাধারণ মানুষ আছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এরপর শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অভিযান শুরু করে। টানা ১১১ ঘণ্টার সেই অভিযান শেষ হয় চার জঙ্গির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। যাদের দুজনের বুকে সুইসাইড্যাল ভেস্ট বাধা ছিলো। আর বাকি দুজনের মৃত্যু হয় সুইসাইড্যাল ভেস্টের বিস্ফোরণে। নিহতদের মধ্যে জেমএমবির শীর্ষ নেতা জঙ্গি মুসা থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এখন নিহত জঙ্গিদের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।
অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর একদিনের মাথায় ওই বাড়িতে আটকে থাকা ২৮ পরিবারের ৭৮ জনকে অক্ষত উদ্ধার করে প্যারা-কমান্ডোরা। এই অভিযানের মধ্যেই অভিযানস্থলের বাইরে ৩০০ গজ উত্তরের রাস্তায় দুই দফা বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত এবং আরও ৪৪ জন আহত হন।
সিলেটের ঘটনার আগে রাজধানীর আশকোনার র্যাবের অস্থায়ী সদর দপ্তরে আত্মঘাতী হামলা, এর একদিন পর র্যাবের উপর হামলা চেষ্টা, এরপর আবারও বিমান বন্দরের কাছে আশকোনাতে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এসবের পরে আসে আতিয়া মহলের ঘটনা। টানা চারদিন ধরে আশঙ্কা এবং চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে সিলেটসহ সারা দেশের মানুষ।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এবং খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামে বাড়ি দুটিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিলেটের মতো মৌলভীবাজারের ওই দুই এলাকার আশেপাশের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এখানেও পুলিশকে লক্ষ্য করে আস্তানার ভেতর থেকে জঙ্গিরা গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ছে।
গত ৭ মার্চ চট্টগ্রামের মিরসরাই এবং ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ডের দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিলো।
মৌলভীবাজার ও কুমিল্লার জঙ্গি আস্তানা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, এই অভিযানের জন্য সোয়াটই ‘যথেষ্ট’। তবে প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে।