চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সিংগারা-পুরিতে প্রতিদিন ব্যয় ৩ কোটি টাকা

সকালের নাস্তার পর, দুপুরের খাবারের আগে অথবা বিকেলে চায়ের টেবিলে সিংগারা কিংবা পুরি খাননি বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। হোক সে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অথবা অফিস আদালতের চায়ের আড্ডা সেখানেও অন্যতম অনুসঙ্গ সিংগারা-পুরি। শুধু খাবার নয়, এটা দৃষ্টির বাইরে থাকা এক বিশাল অর্থনৈতিক লেনদেন।

এই ধরুন, মাহফুজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্রের প্রতিদিনের আড্ডায় সিংগারা চাই-ই-চাই। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই সিংগারা খায় সে। তার রুষ্টপুষ্ট স্বাস্থ্যেও যে সিংগারা অপার অবদান তা অস্বীকার করেনি ।

মাহফুজ বলেন, আমি সিংগারা ছোট বেলা থেকেই খেতে পছন্দ করি। এখন দুপুর হয়ে গেছে কোন খাবার নেই; তাই সিংগারাই খাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, চায়ের টেবিল অথবা অফিস আদালত সবখানেই হাল্কা নাস্তা হিসেবে সিংগারা অথবা পুরির কদর বহুদিনের।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেখানে ৭ শতাংশ ছুঁয়েছে, সেখানে ছোট্ট এ সিংগারা অথবা পুরির অবদান কতটুকু এ নিয়ে হয়ত ভাবেন না কেউই। সিংগারা এবং পুরি তৈরির সঙ্গে রয়েছে আলু এবং আটা উৎপাদনের সম্পর্ক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে মতে, বাংলাদেশে বাৎসরিক আলু উৎপাদিত হয় প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ২৩ হাজার ৩শ মেট্রিক টন আলু। দেশে বার্ষিক গম উৎপাদন হয় প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার রবিন বলেন, আমাদের দেশে রেস্তোরাঁ সংখ্যা কম বেশি ৫০ হাজার। এর বাইরেও যে সব রেস্তোরাঁ আছে সেটা তো আমার হিসেবে যা এসেছে তার চার ভাগের এক ভাগ হবে।

রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির হিসেব মতে, দেশে নিবন্ধিত রেস্তোরাঁ আছে প্রায় ৫০ হাজার আর অনিবন্ধিত রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি। প্রতিটি রেস্তোরাঁয় শুধু সিংগারা বা পুরি তৈরিতে গড়ে প্রতিদিন ১০ কেজি আলু এবং ৫ কেজি ময়দার ব্যবহার হয়। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন মোট আলু ব্যবহার হয় ৭ লাখ কেজি বা ৭শ মেট্রিক টন আর ময়দা ব্যবহার হয় সাড়ে ৩ লাখ কেজি বা সাড়ে ৩শ মেট্রিক টন। দেশের আলুর প্রায় ২ শতাংশ এবং গমের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবহার হয় শুধুমাত্র সিংগারা ও পুরি তৈরিতে। ওই হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন মানুষ সিংগারা এবং পুরি খায় প্রায় ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার।

দেশের সামগ্রিক গম এবং আলুর উৎপাদন এবং ব্যবহারে এভাবে প্রভাব রেখে চলেছে সিংগারা এবং পুরি। অথচ এখনো অর্থনৈতিক হিসেব নিকাশের বাইরেই রয়ে গেছে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নিরব ভূমিকা রেখে চলা নিত্যদিনের খাবার সিংগারা-পুরি।