নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছিলেন সালমান শাহ। সেসময়ে তার অভিনয়, বাচনভঙ্গি আর ব্যক্তিত্ব সবকিছুই যেন ছাপিয়ে গিয়েছিল অন্য সব হিরোদের চেয়ে। এ কারণে কৈশোরের নায়ক সালমান শাহ’র সেই কথাগুলো আজও মনে পড়ে আলোকচিত্রশিল্পী তানভীর আশিকের।
চলচ্চিত্রের এই যুবরাজের ২১ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি আরও একবার প্রিয় নায়ককে স্মরণ করে লিখেছেন:
‘‘১. তখন সবে কৈশোরে পা দিয়েছি। নাটাই বিক্রি করে ১০ টাকা দিয়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাটা দেখেছিলাম। সিনেমা দেখে মৌসুমীর প্রেমে পড়লাম। আমি যাকে মনে মনে ভালোবাসতাম, সে দেখতে মৌসুমীর মতো ছিল। একটা ছুরিও কিনেছিলাম। পিতলের বাট ওয়ালা। ভেবেছিলাম বড় হয়ে প্রেমটেম করে মরে টরে যাব সালমানশাহ’র মত।
২.
বলাইদা’র কাছ থেকে তারকালোক পত্রিকা নিয়ে পড়তাম। সেখানেই হয়তো পড়েছিলাম, মৌসুমী সালমানশাহ্’র সাথে অভিনয় করবে না। ফলত আমিও সালমান শাহকে ত্যাগ করলাম। বাঁকা ত্যাড়া ওমরসানিই ভালো। যেহেতু মৌসুমী তারে চায় আবার একটু মারপিটও করে। রুবেল ছিল এক নম্বরে।
৩.
সালমান শাহর মৃত্যুর আগে আমি চারটা সিনেমা দেখছিলাম তার। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘মহামিলন’, ‘কন্যাদান’। ‘কন্যাদান’ ভালো লাগে নাই। সেই শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর,১৯৯৬) সিনেমা দেখার ফাঁকে চারটার সংবাদে যখন জানালো সালমানশাহ আর নেই। খুব আহত হয়েছিলাম। সারাটা বিকেল প্রচণ্ড মন খারাপ ছিল। বিলিভ ইট অর নট, আমি তখন থেকেই মনে মনে সিনেমা বানাই। আমার একটা সিনেমায় সালমানশাহ, ওমরসানি আর রুবেল ছিল।
৪.
যাইহোক, সালমানশাহ’র মৃত্যুর পর সোনালী টকিজের রূপালি পর্দায় আসলো ‘স্বপ্নের পৃথিবী’। সুদীপ্ত, রফিক আর আমি দেখতে গেছিলাম। মুগ্ধ হইছিলাম সিনেমা দেখে। ‘তুমি আমার মনের মানুষ মনেরই ভেতর, তুমি আমার জান বন্ধু অন্তরের অন্তর’।
সেই থেকে সালমানশাহকে পছন্দ করলাম। তারপর সালমানশাহ’র সবগুলো সিনেমাই আমার দেখা হলো। শাবনূরকেও পছন্দ করলাম।
৫.
‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা, নিজেকে অামি ভুলতে পারি তোমাকে যাবে না ভোলা’ ‘আনন্দঅশ্রু’। সালমানশাহ তো সালমানশাহই। এই সিনেমা দেখে কাঞ্চিকে খুব ভালো লেগেছিলো। প্রায়ই আমার কাঞ্চির জন্য মন খারাপ হত। হাইস্কুলে পড়ি। আগের শহর ছেড়ে নতুন শহরে। তখন একটা সাইকেল ছিলো আমার। সাইকেল চালিয়ে চালিয়ে স্কুল পালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতাম। মনে মনে কাঞ্চিকে খুঁজতাম। নিজেকে সালমান শাহ ভাবতাম।
৬.
সালমান শাহ তার সময়ের বিশ্ব চলচ্চিত্রের সকল হিরো’র থেকে স্মার্ট ছিল, সে টম ক্রুজই হোক আর শাহরুখ খানই হোক, সালমান শাহ ছিল সালমান শাহ, তার ধারে কাছে কেউ ছিল না।’’