চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক বিশ্ব সিনেমার এক দুর্দান্ত আবিষ্কার ‘ডুব’: ইমন

চলতি বছরের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমার নাম ‘ডুব’। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ছবিটি নির্মাণের শুরু থেকেই ছিল আলোচনার শীর্ষে। ছবির বাজেট, কাস্টিং, গল্প এবং সেন্সর বোর্ডের বাধা সব মিলিয়ে ছবিটি প্রচারমাধ্যমে বিস্তর হাইপ তৈরি করেছে। যা মুক্তির আগে যেকোনো বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে বিরল।

শুধু তাই না, ছবিটি দেশের মাটিতে ২৭ অক্টোবর মুক্তি পেলেও এরইমধ্যে বিশ্বের নামিদামি ফিল্ম ফেস্টিভালগুলোতেও প্রদর্শন ও প্রতিযোগিতা করে এসেছে। সদ্য সমাপ্ত বুসান আন্তর্জাতিব ফিল্ম ফেস্টিভালেও ছবিটি প্রদর্শীত হয়েছে। বাংলাদেশে মুক্তির আগেই যেখানে বসে ছবিটি দেখেছেন দেশ বিদেশের বেশকিছু মেধাবী নির্মাতারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কাগজেও এসেছে ছবিটি নিয়ে অসাধারণ সব রিভিউ। কিন্তু বুসান ফিল্ম ফেস্টিভালে বসে ‘ডুব’ দেখার পর ছবিটি নিয়ে মুল্যায়ণধর্মী একটি লেখা লিখেছেন দর্শকপ্রিয় ও সমালোচকদের কাছে প্রশংসনীয় ছবি ‘জালালের গল্প’র নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন। ফারুকীর ‘ডুব’ নিয়ে এই নির্মাতার মুল্যায়ণ চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল-

১৫ অক্টোবর এশিয়ান ফিল্ম একাডেমীর কাজ শেষ করে বুসানের সেন্টাম সিটির লত্তে সিনেমা হলে দেখি ‘ডুব’ ছবির কোরিয়ান প্রিমিয়ার। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ক্যামেরা আর ধীর নির্দেশনায় ফারুকি ভাইয়ের এই কাজটি আগের সবগুলো কাজ ছাড়িয়ে গেছে। অবাক চোখে নিয়ে দেখি ফারুকি ভাইয়ের নতুন ঢঙের গল্প বলা। ধীর, স্থির, শান্ত গল্পের পরতে পরতে ছিল সুপ্ত এক আগ্নেয়গিরি।

অগ্নুৎপাত না ঝড়িয়ে গল্পের ভাজে ভাজে দেখিয়েছেন চরিত্রগুলোর অসহায়ত্ব। ভিলেনহীন ছবিটিতে দর্শকের মননে লুকিয়ে থাকা নৈতিক-অনৈতিক বোধগুলোই যেন এক একজন ভিলেন হয়ে সামনে আসে। নিজ ভাষায় নির্মিত বলেই চোখে জল আসছিল কিনা বোঝার জন্য সন্তর্পণে চোখ মুছতে মুছতে আসে পাশে খেয়াল করি! কোরিয়ান সহ বিদেশী আর দর্শকের একি সাথে চোখ মোছা দেখে বুঝতে পারি… স্থান-কাল-পাত্রের সীমারেখা ভেদ করে ‘ডুব’ হয়ে উঠেছে মানবিক ও সার্বজনীন।

আমাদের সিনেমা যখন তর্জন-গর্জন-চিৎকারে নিজেদের মত করে গল্পের অলগলি খুঁজে বেড়াচ্ছে ‘ডুব’ তখন সন্তর্পনে এগিয়ে যায় নির্দেশকের স্থির দেখার চোখ দিয়ে। শান্ত ছিল খুব চরিত্রগুলো! এরা চিৎকার করে দুঃখের বয়ান কেউ দেয়নি। শক্তিমান অভিনেতার বাংলাদেশি সংজ্ঞার মত অনেক বলিষ্ট কণ্ঠে অভিনয় দেখিয়ে দিতে চায়নি। চরিত্রগুলো চরিত্র হয়ে উঠতে উঠতেই তাই মনের মধ্যে দাগ কেটে যায়।

ছবি শেষ হরার পর ফারুকি ভাইয়ের আগের সব কাজ ছাড়িয়ে নতুনভাবে এই ডুবকে আবিষ্কারে তাই আমি ক্রিটিক বা নির্মাতা না বরং একজন দর্শক হিসেবে ‘ডুব’ সিনেমার মাহাত্ম বুঝতে পারি। আমার কাছে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে ‘ডুব’ সাম্প্রতিক বিশ্ব সিনেমার এক দুর্দান্ত আবিষ্কার। নিজের গল্প বলাতে এত সাবলীলতা আর ‘ডুব’-কে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে চলমান ঘটনাপ্রবাহ তাই বাস্তব আর সিনেমাকে যেন একি সুতোয় গাঁথে। দর্শক হিসেবে ডুবের গল্প যেন শুরু হয় ছবিটির শেষ দৃশ্যে!মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইকে অভিবাদন নিজের নির্মানে এই সাহসিক যাত্রার জন্য। দলে বলে হলে যাবার সময় এখন।