মার্কিন মেরিন সেনাদের সঙ্গে আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা ক্যান্সার আক্রান্ত একটি কুকুর মৃত্যুর পর সামরিক মর্যাদায় শেষ বিদায়ের সম্মান পেয়েছে। ১০ বছর বয়সী সেনা (Cena) নামের ব্ল্যাক ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুরটিকে সামরিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চোখের জলে বিদায় জানান মনিব ল্যান্স কর্পোরাল জেফ ডি ইয়াং।
এই কুকুরটি টানা তিন বছর আফগানিস্তানে মার্কিন মেরিন বাহিনীর সঙ্গে বোমা সনাক্তকরণের কাজ করেছে। ২০১৪ সালে তাকে মেরিন থেকে অবসর দেয়া হয়।
দু’সপ্তাহ আগে সেই সেনার হাড়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ভবিষ্যতের ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে তাকে ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার প্রেক্ষিতেই ডি ইয়াং আগে তার প্রিয় কুকুরকে খুশি করার জন্য যা যা সম্ভব করলেন।
এরপর মিশিগানে সেনাবাহিনী আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেরিন বাহিনীর এই হিরোকে সামরিক মর্যাদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। কয়েকশ’ মানুষের উপস্থিতিতে সেনাকে তার মনিব কাঁধে করে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসেন। ভীড় থেকে অসংখ্য মানুষ এসে সেনাকে আদর করে দিয়ে যায়।
বিদায় সংবর্ধনার অনুষ্ঠান শেষে কুকুরটিকে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর আবার ডি ইয়াংই ছলছল চোখে আমেরিকান পতাকায় ঢাকা তার ছোট্ট কফিনটি বয়ে নিয়ে আসেন।
কাঁদতে কাঁদতে ডি ইয়াং বলেন, ‘১৯ বছর বয়সে যখন আমি দেশের বাইরে শিখছিলাম কীভাবে দায়িত্বশীল হতে হয়, আমার সঙ্গে ছিল সেনা। আর এখন ২৭ বছর বয়সে এসে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটি অংশকে হারিয়ে ফেললাম।’
২০০৯ ও ২০১০ সালে আফগানিস্তানে আলাদা দু’টি সফরে ডি ইয়াংয়ের সঙ্গে সেনাকে দেয়া হয়। তখন থেকেই ভাব হয়ে যায় তাদের। ২০১৪ সালে ডি ইয়াংও অবসর নিয়ে দেশে ফিরে যান। তখন সেনাকে পোষা কুকুর হিসেবে সঙ্গী করে নেন তিনি।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়টায় পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের সঙ্গে লড়াই করতে সেনা তাকে অনেক সাহায্য করেছে বলে টেলিগ্রাফকে জানান ডি ইয়াং। তিনি বলেন, একসঙ্গে কাজ করার সময় তালেবানের ভারী গুলিবর্ষণ থেকে সেনাকে বাঁচাতে একবার তাকে কোলে নিয়ে তিনি পুরো নদী পার হয়েছিলেন, নিজের পরোয়া না করে দূরে ছুঁড়ে মেরেছিলেন যেন তার কোনো ক্ষতি না হয়।
ডি ইয়াং-সেনা মরুভূমির বরফ ঠাণ্ডা রাতগুলোতে একে অন্যকে উষ্ণ রাখতেন। ডি ইয়াং যখন মাত্র তিন সপ্তাহে সাতজন বন্ধুকে হারিয়েছিলেন, এই কুকুরটাই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী।