চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাদাকাতুল ফিতর ও ইসলামের মানবিকবোধ

সারা বছরের সাধারণ দান-সাদকাকে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। বছরে একবার যাকাত আদায় করা সম্পদশালীদের ওপর অপরিহার্য করে দিয়ে এই ধর্ম। বিভিন্ন কাফফারাত দানের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে অর্ন্তভূক্ত করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও ঈদুল ফিতরের দিন বিশেষ ভাবে সাদাকাতুল ফিতর নামক বিশেষ প্রকারের একটি দানকে ইসলাম অপরিহার্য করে দিল কেন?

এই প্রশ্নের সোজা-সাপ্টা জবাব একটাই। ইসলাম ধর্মের তীব্র মানবিকবোধ। মানুষের প্রতি এই ধর্মের অসামান্য মমত্ববোধ আছে। ইসলামের এই মানবিকবোধের কারণে এত প্রকারের দান-খায়রাতের বিস্তৃত ব্যবস্থা থাকার পরও ঈদের দিনের সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে।

ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানদের মূখ্যত দুই ঈদের মধ্যেই আনন্দ উদযাপন একধরণের সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালানো হয়েছে। ঈদের ভালো খাবার, ভালো পোষাক, ভালো করে চলাফেরা করা সকলের জন্যই। এক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষগুলোর কথা চিন্তা করা হয়েছে ভীষণ ভাবে। তাদের রান্না ঘরে কীভাবে ভালো খাবার রান্না হবে, তাদের গায়ে সুন্দর ও নতুন জামা আসবে কীভাবে, তার একটি যৌক্তিক ও কার্যকর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আমাদের পেয়ারা নবী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সে কারণে হাদীস শরীফে সাদাকাতুল ফিতরের যে উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, তন্মধ্যে গরীবের ভালো খাবারের বিষয়টি অন্যতম।

ইসলামের মানবিকবোধ উন্নত বিবেকবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। সে কারণেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার সত্যিকারে উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয়, যে পেট ভরে খায়- অথচ তার প্রতিবেশীর অভুক্ত হয়ে দিন কাটায়।’ তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘হযরত জিব্রাঈল আ. প্রতিবেশীর অধিকার নিয়ে আমাকে এত বেশি তাগিদ দিয়েছেন যে, আমার ভয় হচ্ছিল তিনি প্রতিবেশীকে আমার সম্পদের উত্তরাধিকারীই বানিয়ে ছাড়েন কি না।’

ইসলামের এ মানবতাবোধ কখনো কখনো ধর্মের সীমানাও অতিক্রম করে যায়। যেমনটি আমরা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনার্দশে দেখতে পাই। এক ইহুদী যুবক অসুস্থ হওয়ার সংবাদ পেয়ে তিনি তাকে দেখতে তার ঘরে তাশরীফ নিয়ে গিয়েছিলেন। মানুষ মানুষের জন্য, এই শিক্ষাটি তীব্র হয়ে উঠেছিল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে।

এক বৃদ্ধা ভারী বোঝা নিয়ে মক্কার রাস্তায় হাটছিলেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা কোথায় যাবেন? বোঝাটা আমার কাঁধে দিন, আপনি যেখানে যাবেন আমি ঠিক সেখানেই পৌছে দেব।’ বুড়ি মা অচেনা নবীর কাঁধে বোঝা তুলে দিয়ে বললেন, ‘বাবা! মুহাম্মদ নামের একজন নতুন ধর্ম নিয়ে এ দেশে এসে আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মকর্মকে বিলীন করে দিচ্ছে, সে জন্য দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’ গন্তব্যে পৌঁছার পর বৃদ্ধা যখন পরিচয় জানতে চাইলেন, কাতর কন্ঠে তিনি বললেন, “‘মা আমার নামই মুহাম্মদ, আপনি যার ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে এলেন।’ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই মানবিকবোধ দেখে ওই বৃদ্ধা মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে সঠিক বিষয়টি বুঝার তাওফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।