চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আগের মতো মেনে না নিয়ে সহিংসতা রুখতে ডিভোর্স দিচ্ছে নারী

অপু বিশ্বাসকে শাকিব খান ডিভোর্স লেটার পাঠালেও রাজধানীতে যেসব বিয়ে ডিভোর্সে গড়াচ্ছে সেখানে বিবাহ বিচ্ছেদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত আসছে নারীর কাছ থেকে। কারণ হিসেবে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মেয়েরা শেষ পর্যন্ত সংসার টিকিয়ে রাখতে চাইলেও একান্ত বাধ্য হয়ে তারা যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন সেটা সম্ভব হয়েছে নারীর শিক্ষা, আত্মনির্ভরশীলতা, পারিবারিক সহিংসতা আর মেনে না নেওয়ার আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব এবং ডিভোর্সের প্রয়োজনে মেয়েদের পরিবার থেকে সমর্থনের কারণে।

স্ত্রী ডিভোর্স দিয়েছেন এরকম কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অনাকাঙ্খিত হলেও বিবাহ বিচ্ছেদে গেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ  বর্ষের শিক্ষার্থী জাহান (ছদ্মনাম)। বাবা-মায়ের পছন্দমতো ২০১৫ সালে বিয়ে করেন কম্পিউটার প্রকৌশলী নাসির (ছদ্মনাম) কে। বিয়ের প্রথম মাসটি বেশ ভালো কাটলেও এরপর থেকে শুরু হয় ঝামেলার। এর মধ্যে মেয়েটি মা হলেও সন্তানকে দেখতে যাননি নাসির। শেষ পর্যন্ত তাই পরিবারের সমর্থনে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান জাহান।

এমনকি দীঘদিন প্রেমের পর যে বিয়ে তারও কিছু পরিণতি গড়াচ্ছে বিচ্ছেদে।

এমনই এক দম্পতি ছিলেন মিতু (ছদ্মনাম) ও রাজন (ছদ্মনাম)। সম্পর্কের শুরুটা সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  তিন বছরের সম্পর্কের পর বিয়ে। তবে বিয়ের এক বছর পর থেকেই পালটে যেতে থাকেন রাজন। মিতু আবিষ্কার করেন তার স্বামী অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। বিষয়টি পরিবারকে জানালে পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই রাজনকে ডিভোর্স দেন মিতু।

২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডিভোর্সের নোটিশ পাঠানো হয়েছে ২৪ হাজার ৯১২টি। এর মধ্যে পুরুষের পাঠানো নোটিশের সংখ্যা আট হাজার ৯৬ এবং নারীর পাঠানো নোটিশের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮১৬ যা পুরুষের তুলনায় সংখ্যায় প্রায় দ্বিগুণ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ডিভোর্সের কেইস ফাইল হয়েছে সবচেয়ে বেশি, চার হাজার ৮৪৭টি; এর মধ্যে পুরুষ দিয়েছে এক হাজার ৪২১টি এবং নারী দিয়েছে তিন হাজার ৪২৬টি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত শুধু ওই অঞ্চলেই ডিভোর্সের নোটিশ পাঠানো হয়েছে তিন হাজার ২৫৬টি। এর মধ্যে পুরুষের পাঠানো নোটিশের সংখ্যা এক হাজার ৩২৪টি ও নারীর পাঠানো দুই হাজার ৭২টি ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বর্তমানে সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনাচারণেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। মানুষের সহিষ্ণুতা দিন দিন কমছে। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষকে যেমন কাছে এনেছে, তেমনি আবার দূরেও ঠেলে দিয়েছে। এসবের অতি আধুনিকায়নের ফলে মানুষ তার পরিজন থেকে ক্রমশই দুরে সরে যাচ্ছে।

“তবে আগের তুলনায় বর্তমানে পারিবারিক পর্যায় থেকে সচেতনতার হার অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে আগে মেয়েরা সহিংসতার শিকার হলেও পরিবার থেকে বিষয়টি মেনে নিয়ে সংসার করতে বলা হতো। চাপ দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে পিতা-মাতারা সেই অবস্থান থেকে অনেক সরে এসেছেন।”

প্রয়োজনে ডিভোর্সে মেয়েদের এগিয়ে থাকার এটি একটি কারণ বলে সমাজবিজ্ঞানী সালমা আক্তার মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বর্তমানে মেয়েরা অনেক বেশি স্বাধীন, শিক্ষিত, আত্মপ্রত্যয়ী হচ্ছে যার কারণে ডিভোর্স বাড়ছে। অাগে মেয়েরা কষ্ট করে হলেও সংগ্রাম করে স্বামীর সংসারে টিকে থাকতে চাইতো। কিন্তু বর্তমানে মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্বাবলম্বী, আত্মপ্রত্যয়ী। তাই নারী নির্যাাতনের শিকার হলে সেটা মেনে নিচ্ছে না।

বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডিভোর্সের পরিসংখ্যানে মেয়েদের ডিভোর্স দেয়ার হার বেশি বলেও পরিসংখ্যানবিদরা মনে করছেন।