চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সমালোচনার জবাব দিতে এখনও দৃঢ় সংকল্প সু চি

রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো জাতিগত নিধনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী মিয়ানমার সরকারের সমালোচনার জবাব দেয়ার দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি।

জাপানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ইঙ্গিত দেন তিনি।

সু চি বলেন, মিয়ানমার থেকে ৪ লাখ ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পেছনে যে বিষয়গুলো কাজ করেছে সে সম্পর্কে তিনি আরও খতিয়ে দেখবেন। এছাড়া কিছু সংখ্যক শরণার্থীকে ফিরিয়ে আনার জন্য যেকোন সময় ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে তার সরকারের প্রস্তুতির পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।

মিয়ানমারের কূটনৈতিক গোষ্ঠীকে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের সংঘাত আক্রান্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনের সুযোগ দেয়ার আশ্বাস দিলেও সাক্ষাৎকারে সু চি বলেছেন, চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রস্তাবিত তদন্ত মিশনের জন্য কাউকে দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।

রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা হওয়ার পাশাপাশি সু চি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সেদিক থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা ভাবছেন রাখাইন সংকট মিয়ানমারের অর্থনৈতিক ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকার দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া জোরদার করেছে, বিশেষ করে কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে।

মৌলবাদের উত্থান ঘটাতে সক্ষম এমন দারিদ্র্য নির্মূল করতে এ ধরণের সংস্কার খুব জরুরি বলে মন্তব্য করেন সু চি।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার- অং সান সু চি

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার- অং সান সু চি

৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সব ধরণের সহিংসতা-সংঘর্ষ বন্ধ রয়েছে এবং বর্তমানে রাখাইনে পরিস্থিতি যথেষ্ট শান্ত বলে সু চি বারবার দাবি করলেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে এখনো আগুন জ্বলছে বলে অভিযোগ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ২২ সেপ্টেম্বরেও সেখানকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে- এরকম ভিডিও প্রমাণ থাকার কথাও জানিয়েছে তারা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।