চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে পুরুষ কি লাজুক? আসল কারণ পুরুষতন্ত্র

স্বাধীনতার পর দেশের অনেক ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতির বিপরীতে মধ্যম আয়ের দেশ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূল এবং নারীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার হিসাব করলে এই তালিকা অনেক লম্বা। তবে এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। চ্যানেল আই অনলাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, জন্মনিয়ন্ত্রণের সব দায়িত্ব নারীর উপর চাপিয়ে দিয়ে দেশে নয়জন নারীর বিপরীতে মাত্র একজন পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। গত চার দশকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারী আটগুণ হয়েছে, আনুপাতিক হারে পুরুষের অংশগ্রহণও বেড়েছে; কিন্তু শুরুতে যেভাবে নারীর উপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হতো এখনো সেই প্রবণতাই চলছে। ১৯৭৫ সালে পদ্ধতি গ্রহণকারী প্রায় সকলেই যেমন ছিলেন নারী, এখনো তাই।  স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে কোনো উন্নয়ন হয়নি, তা নয়। পরিবার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশের হাসপাতালগুলোতেও রয়েছেন বিশ্ব মানের ডাক্তার, কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে বিশ্ব মানের সেবাও। তবে এক্ষেত্রে হতাশার বিষয় হলো- বিয়াল্লিশ বছর আগে ০.৭ শতাংশ পুরুষ কনডম ব্যবহার করতেন, আর এখন ৬.৪ শতাংশ পুরুষ কনডম ব্যবহার করেন; এর বড় অংশই অবশ্য শহরে। একই সময়ে খাওয়ার বড়ি ব্যবহারকারী নারীর হার ২.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশে উঠেছে। এখনো জন্মনিয়ন্ত্রণে পিলই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি।  এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে সামনের বছরগুলোতে প্রতিবছর ২.৭ শতাংশ হারে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার বাড়াতে হবে। পুরুষদের জন্য বিজ্ঞানসম্মত কিছু পদ্ধতি থাকলেও যথাযথ প্রচারণার অভাবকে অনীহার প্রধান কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন। আমরা তাদের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করি। এ বিষয়ে আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে আগের মতো নতুন করে আবারও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ও পুরুষদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের এ বিষয়ে কোন লজ্জা বা ভয়ের কোন বিষয় যে নেই, সেই বিষয়ে তাদেরকে জানাতে হবে। সরকারকে নতুন করে নিজে থেকে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তারের সঙ্গে আমরাও বলতে চাই: শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও জন্মনিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে।