চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সত্যিই কি এভারেস্ট? ২১ মে এভারেস্ট জয় করা মুহিতের গল্প

এভারেস্ট জয়ের বর্ষপূর্তিতে ফেসবুকে নিজের কথা আরেকবার জানিয়েছেন এম এ মুহিত।

তিনি লিখেছেন: ‘২০ মে ২০১১ রাত সাড়ে ৮টায় আমরা প্রায় ২৭,২৩০ ফুট উঁচুতে তিব্বত দিকের তিন নম্বর ক্যাম্পের তাবু থেকে বের হয়ে আইস বুটের নিচে ক্রাম্পন লাগাই। রাত ৯টায় হেডলাইটের আলোতে সামিটের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত আরোহন শুরু করি। তখন তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নিচে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাত যত বাড়তে থাকে তাপমাত্রা তত কমতে থাকে। রাতের আধাঁরে পর্বতারোহীদের মাথার হেডলাইটগুলো দেখে মনে হচ্ছিল এভারেস্টের গায়ে সারি বেঁধে জোনাকী পোকা চলছে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরে ইয়েলো ব্যান্ডের কাছে পৌঁছি।

রাত ১২টার দিকে প্রায় ২৮,১১০ ফুট উচ্চতায় ফার্স্ট-স্টেপ নামক ভয়ঙ্কর এক জায়গায় পৌঁছাই। ফার্স্ট-স্টেপ পার হয়ে হেডলাইটের আলোতে প্রথম এভারেস্টের গায়ে পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখতে পাই। রাত একটার দিকে ‘মাশরুম-রক’–এর কাছে আমার প্রথম অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবর্তন করা হয়। মাশরুম রক থেকেই প্রথম বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাকালু দেখতে পাই। তখন আকাশে ছিল বেশ বড় একটি চাঁদ। চাঁদের আলোয় মাকালুকে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছিল।’

হিমালয়ের চূড়ায় যাওয়ার অভিযানে এম এ মুহিত

পরের বর্ণনায় তিনি জানান: রাত ৩টার দিকে প্রায় ২৮,২৫০ ফুট উচ্চতায় সেকেন্ড-স্টেপ নামের দ্বিতীয় বাধার কাছে এসে পৌঁছি। সেকেন্ড-স্টেপ পার হওয়ার পর শেরপা গাইড পেম্বা দর্জির হাতের বিশেষ ঘড়িতে দেখলাম তাপমাত্রা তখন মাইনাস ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এখানেও কয়েকটা মৃতদেহ পরে থাকতে দেখলাম।

‘হঠাৎ করেই একটু জোরে বাতাস বইতে লাগলো। ঠান্ডা বাতাস চোখে লাগা মাত্রই ঝাপসা দেখতে লাগলাম। চোখে ঝাপসা দেখায় কিছুটা ধীরে এগুতে লাগলাম।’

তিনি লিখেছেন: ভোর ৫টার দিকে আমি যখন প্রায় ২৮,৫৭৫ ফুট উঁচুতে তিব্বত দিয়ে এভারেস্টে আরোহনের তৃতীয় বড় বাধা থার্ড-স্টেপে পৌঁছাই, তখন কানে এলো কে যেন ‘হেলপ হেলপ’ বলে চিৎকার করছে। আমার ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। আমি থার্ড-স্টেপের কাছে পৌঁছাতেই দেখলাম উচ্চতাজনিত অসুস্থতা ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আয়ারল্যান্ডের একজন পর্বতারোহী মারা গেছেন। ৮ হাজার মিটার (২৬,২৫০ ফুট) উচ্চতা থেকে শুরু হয় ‘ডেথ জোন’ বা মৃত্যুপুরী।

হিমালয়ের চূড়ায় যাওয়ার অভিযানে এম এ মুহিত

‘তখন সামনের দিকে তাকাতেই মনে হচ্ছিল, এই তো একেবারে কাছেই চূড়া দেখা যাচ্ছে। এখনই বুঝি চূড়ায় উঠে যাব। কিন্তু না, তখনও আমাকে আরও প্রায় সাড়ে চারশ ফুট উঁচুতে উঠতে হবে। সামনের রাস্তাটা সোজা নয়, একে বেঁকে গেছে। ২০১১ সালের ২১ মে নেপাল সময় সকাল ৭টায় আমি এভারেস্টের শীর্ষে উঠে দাড়াই। তখন মনে মনে ভাবছিলাম সত্যিই কি আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানে উঠেছি! চূড়ায় উঠে মিংমা চিরিং শেরপা ও দা কিপা শেরপাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেঁদে ফেলি।’

এভারেস্ট জয়ের পরের বর্ণনায় মুহিত লিখেছেন, এভারেস্টের চূড়ায় আমি প্রায় ৩০ মিনিট থাকি। প্রথম ১০ মিনিট অক্সিজেন–মাক্স পড়ে, তারপর ২০ মিনিট অক্সিজেন মাস্ক ছাড়াই ছিলাম। এভারেস্টের চূড়ায় পা দিয়েই আমার মনে হয়েছে আমি পৃথিবীর রাজা এবং প্রিয় বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানে। এভারেস্ট শীর্ষে দেশের লাল সবুজ পতাকা ওড়াতে পেরে মনে হয়েছে আমি ষোল কোটি মানুষকে গর্বিত করতে পেরেছি।

হিমালয়ের চূড়ায় যাওয়ার অভিযানে এম এ মুহিত

‘বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (BMTC) প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই মানুষটি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি ২০১২ সালের ১৯ মে নেপাল দিক দিয়ে আবার এভারেস্টে আরোহন করি। আমার কাছে দু’বার এভারেস্ট আরোহনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ন ইনাম আল হকের সাথে পরিচয় হওয়া। তিনি আমার মেনটর, আমাদের সত্যিকারের হিরো।’