চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

শোক দিবসে ‘ক্লাস’: কী হচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে

জাতীয় শোক দিবসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভুঁইয়া তারেকের বিরুদ্ধে ‘ক্লাস নেওয়ার’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। তদন্ত করার আগে এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ওই শিক্ষকের কোন ধরনের বক্তব্য ছাড়াই তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একটি ছাত্র সংগঠনের এক কর্মী তাকে ফেসবুকে প্রকাশ্য হুমকিও দিয়েছে।

এসবই ঘটছে যখন ওই শিক্ষকের দাবি তিনি জাতীয় শোক দিবসে কোন ক্লাস নেননি, কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে তার কাছে একটি বিষয় বুঝতে চাইলে তিনি তাদের একটি কক্ষে নিয়ে তাদের বোঝাচ্ছিলেন।

ওই শিক্ষকের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে শিক্ষার্থীরাও। তাকে তদন্ত ছাড়া বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর প্রতিবাদে শিক্ষকদের দ্বারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার ঘটনাও ঘটেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তারেকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তার পক্ষে মানববন্ধন করেছে তার সহপাঠী-শুভাকাঙ্ক্ষীরা্। এমন অভিযোগকে ‘অতিউৎসাহীদের কাণ্ড’ আখ্যায়িত করে সামাজিক মাধ্যমেও লেখালেখি হয়। তারেকের ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে উপাচার্যের দুর্নীতির বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করার কারণেই তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

সবশেষ নিজের নিরাপত্তা শঙ্কায় ওই শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

ঘটনার শুরু যেভাবে
শিক্ষক তারেক এবং শিক্ষার্থীদের দাবি, জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী যথারীতি পালনের পর বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী আসে তার কাছে কাছে একটি টপিক বুঝে নিতে। নিজের রুমে জায়গা না হওয়ায় তারেক তাদের নিয়ে একটি ক্লাসরুমে বসেন। কোন ক্লাস হয়নি। কারণ ওই ব্যাচের ক্লাস এর আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ  হয়ে গিয়েছিল, পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেছে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দাবি, শোক দিবসে ক্লাস নিয়ে তিনি দিবসটিকে অবমাননা করেছেন। তাই তার পদত্যাগের দাবিতে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে এবং প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক তারেকের বহিষ্কার দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেয় সংগঠনটি।

‘উদ্ভুত পরিস্থিতি’ নিয়ে উপাচার্যের বৈঠক
১৬ আগস্ট শিক্ষক তারেকের ব্যাপারে ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য অধ্যাপক আলী আশরাফ। কোন সিদ্ধান্ত না হলেও পরদিন ১৭ আগস্ট বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শিক্ষক তারেককে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। একই দিনে কথিত ‘ক্লাস নেওয়ার’ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। তবে তদন্তের আগেই শিক্ষক তারেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাখ্যায় উপাচার্যের দাবি, উদ্ধুত পরিস্থিতি সামাল দিতেই তিনি তার নির্বাহি ক্ষমতা বলে শিক্ষককে ছুটিতে পাঠান।

উপাচার্য অবরুদ্ধ
শিক্ষক তারেককে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সে আদেশ বাতিলের দাবিতে ওইদিনই উপাচার্যকে তার নিজ কার্যালয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন ৫০-৬০ জন শিক্ষক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের ৫০-৬০ জন শিক্ষক উপচার্যকে অবরুদ্ধ করেছেন। শিক্ষকদের দাবি তাৎক্ষণিকভাবে  ছুটির আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় তাদেরও বাধ্যতামূলক ছুটি দিতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রভাষক মাহবুবুল হককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর পর শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের সাথে কথা বলতে যায়। কিন্তু তিনি শিক্ষক সমিতিকে সময় দেননি।

ফেসবুকে হুমকি
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক মাহবুবুল হক ভুঁইয়া তারেককে সামাজিক মাধ্যমে হুমকি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী।

শুক্রবার প্রকাশ্যে আসা এক ফেসবুক পোস্টে সাদ ইবনে সাইদ সাদ নামে নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সক্রিয় ওই কর্মী শিক্ষক তারেককে উদ্দেশ্য করে লেখেন: “ইলিয়াস হোসেন সবুজ ভাইয়ের হুকুমের অপেক্ষায় বেঁচে গেল আলবদর তারেক মাস্টার।। আর একটা রাত পেল দেশদ্রোহীটা শান্তিতে ঘুমাতে।। কিন্তু কালকে??? কি হবে রে তোর???”

এই পোস্টে তিনি কুবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজসহ আরও ১৩ জনকে ট্যাগ করেছেন, যারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

ছাত্রলীগকর্মী সাদ অবশ্য বোধগম্য কারণে দাবি করেছেন, তার আইডি হ্যাক হয়ে গিয়েছিল ৩-৪ দিন আগে। তাই এই পোস্টের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষক তারেকের জিডি
ফেসবুকে এ রকম প্রকাশ্য হুমকি পেয়ে নিজের নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানান তারেক।

সাংবাদিকতা বিভাগের এ প্রভাষক ও সভাপতি শুক্রবার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: গত দুইদিন থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। আজকের পর থেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমি এখন শহরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু মনে ভয় কাজ করছে।

এরপর তিনি সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে শুক্রবার  রাতেই কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।