শুক্রবার সকাল দশটা। রাজধানী শাহবাগের শিশু একাডেমি কচি কাঁচায় ভরে গেছে। শিশুদের কলকাকলিতে মুখোর হয়ে উঠেছে একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ। ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানের তালে তালে ছয় শিশুর নাচের মধ্য দিয়ে শুরু হলো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের ১২ খণ্ডের কিশোর সমগ্র প্রকাশনা অনুষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার এর অায়োজন করে সময় প্রকাশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমি সাগরকে বড় হয়ে উঠতে দেখেছি। ক্রমাগত সে ডালপালা ছড়াচ্ছে। এতবড় মিডিয়া সামলানোর পাশাপাশি সে লিখছে এবং শিশুদের জন্য লিখছে। ছোটদের জন্য লেখা সবচেয়ে কঠিন। কারণ তাদের মনের নাগাল পাওয়া সহজ নয়। বাচ্চাদের মন কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। সাগর ছোটদের মনের অলিগলিতে বিচরণ করে লিখে যাচ্ছে। শিশু সাহিত্যই সাগরকে অমর করে রাখবে।’
অনুষ্ঠানে দর্শকদের অনুরোধে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজির লিটন, শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, শিশু সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ শাহরিয়ার কবির, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা আফজাল হোসেন ও সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ। এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘ফরিদুর রেজা সাগর বাঙালিয়ানার সূত্র এবং ক্ষেত্রগুলোকে সনাক্ত করেছেন এবং সেগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে তার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচার করছেন। রবীন্দ্রমেলা, নজরুলমেলা, বর্ষবরণের মতো অনুষ্ঠানগুলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নাটক লিখেছেন ইবনে সিনাকে নিয়ে, শেখ সাদিকে নিয়ে। শিশু সাহিত্য তার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। আজ তার কিশোর সমগ্র ১২ খণ্ড প্রকাশ হচ্ছে। একদিন ২৫ খণ্ড প্রকাশ হবে।’
আনজির লিটন সব সাহিত্যিকদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শিশু সাহিত্যের সকল শাখায় ফরিদুর রেজা সাগরের বিচরণ। সাগর তার লেখা দিয়ে শিশুদের বাংলাদেশ চেনাচ্ছে। দেশের আনাচে কানাচে ঘুরছে তার সৃষ্ট চরিত্রের মাধ্যমে।’
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘সাগর অত্যন্ত সরল ও চমৎকার ভঙ্গিতে রহস্য সৃষ্টি করে লেখেন যা থেকে পাঠক বের হতে পারে না। সাগরের লেখায় আটকে যান। সাগরের মধ্যে বড় লেখকের সবগুলো গুণ বিদ্যমান। সে যখন শিশুদের জন্য লেখে নিজেও শিশু হয়ে যায়। এটা বড় লেখকদের গুণ।’
আলী ইমাম বলেন, ‘ফরিদুর রেজা সাগর তার লেখার মাধ্যমে অ্যাপল এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ও ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এর মতো বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। জীর্ণ, ম্লান, ধূসর শিশুসাহিত্যকে স্মার্টরুপে উপস্থাপন করে শিশু সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে। সাগরের লেখা পড়ে শিশুরা দেশকে ভালোবাসবে একং জঙ্গীবাদমুক্ত বাংলাদেশ গরবে।’ আফজাল হোসেন বলেন, ‘ সাগরের লেখা পড়লে বোঝা যায় সে শৈশব হারায়নি। এখনো শিশুদের মনন বুঝে সে উপযোগী লেখা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন।’
স্বাগত বক্তব্যে ফরিদ আহমেদ উপস্থিত অতিথি ও দর্শকের ধন্যবাদ ও ফরিদুর রেজা সাগরকে জানান আন্তরিক অভিনন্দন ।
আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফরিদুর রেজা সাগর একটি প্রচার মাধ্যমের প্রধান ব্যক্তি হয়েও তিনি থাকেন প্রাতপ্রদ্বীপের আড়ালে। শিশুদের তিনি প্রচণ্ড ভালোবাসেন। তার ডেস্কে গেলে দেখা যায় শিশুদের নানান খেলনা। আজ তার ১২ খণ্ডের কিশোর সমগ্র প্রকাশ শিশু সাহিত্যের তথা বাংলা সাহিত্যের জন্য বড় ঘটনা। একদিন তার ২৫ খণ্ড প্রকাশ হবে।’
ফরিদুর রেজা সাগর তার লেখালেখির গল্প করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার দুই কন্যা মেঘনা ও মোহনা ছোটবেলায় বই ভালোবাসতো। বই পেলেই হাতে নিয়ে দেখত। কোথাও গেলে ছোট ছোট পায় হাঁটতে হাঁটতে বইয়ের দোকানে চলে যেত। নেড়েচেড়ে বই দেখত। ওদের বইপ্রীতি দেখেই লেখালেখি শুরু করি। এখন মেঘনা মোহনা অনেক বড় হয়েছে। আজও ওরা আমার লেখার প্রথম পাঠক। শিশুদের নিয়ে লেখা শুরু করে শিশুদের পৃথিবীতে যেন আটকে গেছি। আটকে থাকতে চাই।’
অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে অতিথিদের অংশগ্রহণে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সেরা কণ্ঠ বিজয়ী কোনালের গান ও শিশুদের দলীয় নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। ছোট কাকু খ্যাত শিশু সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা ১২ খণ্ড কিশোর সমগ্রে স্থান পেয়েছে কিশোর উপন্যাস, ভ্রমণ, সায়েন্স ফিকশন, গল্প, নাটক, স্মৃতিগদ্য।
ফরিদুর রেজা সাগর একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বেশকিছু পুরস্কার অর্জন করেছেন।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন