সুব্রত গাইন: আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি, শহীদ জোহা দিবস। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা এদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
১৯৬৯ সালে সারাদেশ তখন গণঅভ্যুত্থানের অন্দোলনে উত্তাল। নিজেদের অধিকার আদায়ে সবাই সোচ্চার। সব জায়গায় অন্দোলনের অগ্নিশিখা দাউদাউ করে জ্বলছে। এরই মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে মাঠে নামে। সেই আন্দোলনে সেনাবাহিনী হামলার ছক কষে।
ছাত্রদের সেনাবাহিনীর গুলি থেকে বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। তখন তিনি বলেছিলেন, কোন ছাত্রের গায়ে একটা গুলি লাগার আগে, সেই গুলি যেন তার গায়ে লাগে। তার সেই কথা জীবন দিয়ে প্রমাণও করে গেছেন। সেনাবাহিনী কোন ছাত্রের গায়ে গুলি করার আগেই আত্মত্যাগী শামসুজ্জোহা বুক পেতে দেন।
গণঅভ্যুত্থানের প্রাক্কালে ড. জোহাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে গণঅভ্যুত্থান আরো বৃহৎ আকার ধারণ করে। আর এরই ধারাবাহিকায় বাঙালিরা অন্দোলন করার শক্তি ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের আত্মহুতি দেওয়ার জন্য পিছপা হয়নি। তার অনুপ্রেরণার ফলে ত্বরান্বিত হয় স্বাধীনতার আন্দোলন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃতুর পর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে তার মৃত্যুর ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও দিবসটি ঘোষণা করা হয়নি জাতীয় পর্যায়ে। মর্যাদা পায়নি জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। বিভিন্ন সময় ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি উঠলে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
দিবসটি উপলক্ষে ভোর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বিভাগ, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতি সংঠন গুলো থেকে র্যালি বের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান, সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ ও রেজিস্ট্রার এম এ বারীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
এরপর শহীদ শামসুজ্জোহা হল সহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভিন্ন বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন, এ্যালামনাই এসোসিয়েশন প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
জাতীয় পর্যায়ে জোহা দিবস পালন এবং তার স্মরণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ আরো অন্যান্য সংঠন। এর মধ্যে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রাবি সাংবাদিক সমিতির মুক্ত আলোচনা সভা।
এছাড়াও এ দিন দর্শকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।