চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু

এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও উখিয়ায় এসেছে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।  প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা মোট রোহিঙ্গার ৬০ শতাংশ। শারীরিক ও মানকিভাবে বিপর্যস্ত বিপুল এই রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সেবা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক বিশেষ সংস্থা ইউনিসেফ।

মঙ্গলবার সংস্থাটির শিশু নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান জিন লিবি এক বিবৃতিতে জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশের গুলি থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় দুই লাখের বেশি শিশু। যা মোট রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ। রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই হিসাব করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এদিন সকালে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা। মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিজের দেশের নাগরিক অন্যের দেশে থাকা সম্মানজনক নয়। এসময় তিনি শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

এসব শিশুদের জীবন বাঁচাতে জরুরি সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু জরুরি নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। বিশেষ করে পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ১ হাজার ১২৮ শিশুর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করেছে তারা।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু: ইউনিসেফ
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু: ইউনিসেফ

গত ২৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলাতেই সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছেন। বিপুল পরিমাণ এই শরণার্থীর ঢল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

হঠাৎ পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনে নেমে এসেছে মানবিক বিপর্যয়। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে শিশুরা।

না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত হেঁটে বা দৌড়ে বাংলাদেশে আসতে গিয়ে পূর্ণ বয়স্কদের পাশাপাশি অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে পৌঁছানো শরণার্থী শিশুদের এখনই জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন।

চোখের সামনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিপুল ধ্বংসলীলা, খুন, ধর্ষণ এবং নিপীড়ন দেখে শিশুরা মানসিকভাবেও ভয়ানক বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা সেবাও এখন দরকার।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেক প্রসূতি মা রয়েছেন। অনেকেই আবার পথিমধ্যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বাংলাদেশে আসার পরে অনেক রেহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। সব মিলিয়ে জরুরি সেবার প্রয়োজন এমন শিশুর সংখ্যা দুই লাখের বেশি।

শরণার্থীদের ঢল না থামায়, ক্যাম্পের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ক্যাম্পে মৌলিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপদ খাবার পানির সংকট বেড়ে চলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা বৃদ্ধ, শিশু ও নারীরা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে বেশি রয়েছেন। দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-জাতিসংঘ

গত ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের কয়েকটি সেনা ও পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের হামলার অভিযোগে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় গত দু’সপ্তাহে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।