চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা গণকবরের সন্ধান: মিয়ানমারের মুখে হত্যার স্বীকারোক্তি

অবশেষে প্রথমবারের মতো রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন আর হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে হত্যাযজ্ঞের কথা স্বীকার করলেও বরাবরের মতোই রোহিঙ্গাদের বাঙালি জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।

গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে জাতিগত নিধন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বারবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই নির্যাতনের কথা অস্বীকার করলেও ডিসেম্বরে নিহতদের গণকবর খুঁজে পাওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করে মিয়ানমার।

সবশেষ বুধবার, বর্মি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং তার ফেসবুক পেজে রোহিঙ্গা গণকবরের সন্ধান পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে তিনি জানান, রাখাইনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। আর এই অভিযানে মাত্র ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ উল্লেখ না করে ‘বাঙালি জঙ্গি’ বলা হয়েছে।

গ্রামবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ওই হত্যাকাণ্ড চালায় বলে তিনি জানান। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড-মিয়ানমার সেনাবাহিনী

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ) জানিয়েছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সময়টার মধ্যে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে একেবারে কাটছাঁট করা হিসেবেও সংখ্যাটি ৬ হাজার ৭শ’র কম নয়, বরং বেশি। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭৩০ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।রোহিঙ্গা-মিয়ানমার-এমএসএফ

প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত হিসেব অনুসারে বাংলাদেশে আগস্ট থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে একে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন কর্মসূচি’ বলে বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।