রোহিঙ্গা ইস্যুতে এশিয়ার সবচেয়ে বড় মোড়ল চীনকে পাশে পাওয়ার আশ্বাস পেলো বাংলাদেশ। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে চীন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফররত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই প্রথম চীনা সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারকে বার্তা দেয়ার কথাও জানিয়েছে দেশটির অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র চীন। সফররত ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার লি জুনের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরে তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানায়। জবাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার লি জুন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট ও তাতে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে চীন সরকার অবগত রয়েছে। সমস্যা সমাধানে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’ চীন মনে করে ‘এই অঞ্চলে শান্তির জন্য মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যায় স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো উচিত।’ মিয়ানমারের যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে তাদের যেন অবিলম্বে ফেরত নেওয়া হয় সেটাও চায় চীন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চীন সরকার শেখ হাসিনার মানবিক অবস্থানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠাবে। এর মধ্যে কাপড়, কম্বল ও তাঁবু থাকবে। তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলার জন্য মিয়ানমারকেও প্রভাবিত করবে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চীন আঞ্চলিকভাবে ও আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা রাখবে। ঠিক এই জায়গাতেই দুর্গত রোহিঙ্গাদের জন্য কার্যকর সহায়তা করতে পারে পরাক্রমশালী চীন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মতো বিশ্ব মোড়লদের সমাবেশে বাংলাদেশ সমর্থন পেলেও মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য আশ্বাস পাওয়া যায়নি। জবাবদিহিতা এড়াতে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেননি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। মানবিক বিবেচনায় রাখাইনে নির্যতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ক্ষুদ্র এই ভুখণ্ডে অনির্দিষ্টকালের জন্য এতো মানুষকে বহন করা কষ্টকর। অন্যদিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে নারাজ। বরং সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারকে তার জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে বিশ্ব মোড়লদের এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্র ক্ষমতাধর চীন যদি এগিয়ে আসে তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে আসে। চীনের আশ্বাসে বাংলাদেশ তাই কিছুটা আশাবাদী হতেই পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলটি যে এক ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য দেখাতে পেরেছে সেজন্য তাদেরকেও আমরা অভিনন্দন জানাই।