মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান রোহিঙ্গা নিধনের প্রেক্ষীতে বিশ্ব রাজনীতির চিত্র তুলে ধরেছেন উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ গোলাম নবী।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “১৯৭১ সালে আমেরিকা বর্বর পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। রাশিয়া ও ভারত দাড়িয়েছিল নির্যাতিত বাংলাদেশিদের পক্ষে।
সেখানে স্বার্থই ছিল মূল, মানবতা নয়।
২০১৭ সালে বর্বর মিয়ানমারের পক্ষে রাশিয়া ও ভারতের অবস্থান এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পক্ষে আমেরিকার অবস্থান একথা সুস্পষ্ট করে দেয় যে, বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর নেতারা সবসময় তাদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থ দেখে, অন্য দেশের নয়।
আমরা যদি বর্বর মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়ানো দেশগুলোর নেতাদের অবস্থানে নিজেদেরকে দেখি তাহলে সহজেই বুঝতে পারব তারা তাদের দেশের বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলেই তারা গণহত্যা ও বর্বরতার ব্যাপারে উচ্চকিত নয়। আবার যারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উচ্চকিত তাদের দেশের নেতাদের অবস্থানে দাঁড়ালে সহজেই বোঝা যায় যে, তারা এই সুযোগে নিজেদের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার একটি প্লার্টফম তৈরি করতে চাচ্ছে। সহজ মানে হলো তারা মওকা খুঁজছে।
আপনার প্রশ্ন হতে পারে, বাংলাদেশ কেন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে? এখানে কীসের বাণিজ্য? এর সহজ উত্তর হলো বাংলাদেশ স্রেফ মাইনক্যার চিপায় পড়েছে। রাঘব বোয়ালদের বাণিজ্য সুবিধা আদায়ের লড়াইয়ে প্রতিবেশী দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হতে বাধ্য হচ্ছে। অন্য কিছু করার নেই। লক্ষ্য করুন, ভারত মিয়ানমারের পদক্ষেপকে সমর্থন জানালেও আবার ত্রাণ দিচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য। সাহায্য সহযোগিতা আসছে আরো অনেক দেশ থেকে। এটাই বিশ্ব রাজনীতি। বাংলাদেশ এখানে দর্শকমাত্র। এক্ষেত্রে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশ। যাই হোক।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বিশ্বে বাণিজ্যের শক্তি মানবতার শক্তির চেয়ে শক্তিশালী। একইসঙ্গে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাধারণ মানুষ সবসময় বর্বরতার বিপক্ষে এবং নির্যাতিতদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটাই ইতিহাসের বয়ান। কিন্তু একটি দেশের সাধারণ মানুষের শক্তি কখনোই ক্ষমতায় থাকা ব্যবসায়ী ও সামরিক বাহিনীর মদদপুষ্ট রাজনীতিকদের শক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী হতে পারেনি। শুধু তখনই সাধারণ মানুষের শক্তির বিজয় হয়েছে যখন সামরিক বাহিনী ও ব্যবসায়ীরা কোন সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।”