চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাস্তায় মাস্তানি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায় কতটা?

গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার অপরাধে একজন বয়স্ক লোককে পায়ে ধরে মাফ চাওয়ানোর মতো একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলো। এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ হলে তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হবে স্বাভাবিক। কিন্তু এই ঘটনার কারণে যতটা আলোচনা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে ওই ভিডিওতে ঢাকা ভার্সিটির নাম আসায়। যারা সমালোচনা করছেন তাদের বেশিরভাগই ওই ঘটনা নিয়ে কিছু বলছেন না, তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!

ঘটনাটি বিশ্লেষণ করা যাক। যে ভিডিও নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটিতে একবার বলতে শোনা গেছে ‘আমরা ঢাকা ভার্সিটির মাস্তান’ আর গাড়িটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার দেখা গেছে। ওই ভিডিওর কোথাও ওই লোকটিকে বলতে শোনা যায়নি ‘আমি ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক’। তিনি বলেছেন: “শিক্ষক বইসা আছে গাড়িতে, আমিও একজন শিক্ষক।” এতে ধারণা করা যায় ভেতরে আরও একজন ছিলেন হয়তো। গাড়িতে যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার ছিল তাই গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেও পারেন, নাও পারেন। কারণ প্রক্টরের ভাষ্যমতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার জাল করার ঘটনাও রয়েছে। ধরলাম গাড়িটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরই এবং তিনিই গাড়িতে বসে ছিলেন। কিন্তু তিনিতো দৃশ্যপটে নেই।যদি প্রসঙ্গক্রমে ওই শিক্ষকের নামও আসে তারপরও তিনি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করেন না! তাই এ ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে আনা উদ্দেশ্যমূলক নয় কি?

যিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তিনি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন, সে কথা প্রমাণিত হয়েছে। তিনিও শিক্ষক তবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

কিন্তু সবাই যে পয়েন্ট ধরে সমালোচনা করছেন সেটা ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ধরেই। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে তারা হয়তো ভিডিওটি মনোযোগ দিয়ে দেখেননি অথবা এরকম একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শোনা মাত্রই সেটা না দেখে ঝাপিয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে বলা হয় ‘শিরোনাম সর্বস্ব’। অর্থাৎ এরা কোন ঘটনার শিরোনাম দেখেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এমনকি মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। পুরোটা পড়ার প্রয়োজন মনে করে না। কিন্তু ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে যারা গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন বা কথা বলেন তারাও যদি ‘শিরোনাম সর্বস্ব’ হয়ে যান তাহলে কীভাবে হবে!? আপনারা যদি ভিডিওটি না দেখে বা ঘটনার গভীরে না গিয়েই বড় বড় আর্টিকেল লিখে বসেন, তা কি যথাযথ হবে?

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু শিক্ষার্থীর অনেক কর্মকাণ্ড নিন্দাযোগ্য। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই করে এবং সমালোচনা প্রথমে তাদের কাছ থেকেই আসে। তার মানে এটা বলা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি বড় অংশ পছন্দ করে না বরং এর ঘোরবিরোধী।

যারা ভাবছেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সাফাই গাইতে আমার এত প্যাঁচাল, তাদের জ্ঞাতার্থে এতটুকু বলতে চাই: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ যেকোন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অন্যতম সমালোচকও আমি। সমালোচনা সবাই করতে পারে, যদি সেটা আসলেই সমালোচনাযোগ্য হয়, এবং সেটা করাই উচিৎ। কিন্তু যে ঘটনায় আসলে কোন দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই, সেটা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যখন প্রতিষ্ঠানটির গুষ্টি উদ্ধারে কাউকে আদাজল খেয়ে নামতে দেখি, তখন আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে আসলেই আমি সন্দিহান।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)