রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে হারিয়ে চতুর্থ বিপিএলের শিরোপা জিতল ঢাকা ডায়নামাইটস। প্রথম দুইবারের শিরোপার পর চতুর্থ আসরে এসে তৃতীয় শিরোপার দেখা ঢাকা ডায়নামাইটস।
ঢাকার দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৪ বল বাকি রেখে ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহী কিংস। আহত হয়ে মাঠ ছাড়া কেসরিক উইলিয়ামস আবারো ব্যাটিংয়ে নামতেই পারেননি। তাই কিংসদের নবম উইকেট পতনের পরই উল্লাসে মাতে সাকিবের শিবির।
১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং কোন প্রকার দূত্যি প্রদর্শন করতে পারে নাই রাজশাহী কিংস।বড় রান তাড়া করতে নেমে সাব্বির ও মুমিনুলের ৪৭ রানের জুটি ছাড়ার কোন ভাল জুটি গড়তে পারে নি রাজশাহী কিংস।
রাজশাহীর তিনজন ব্যাটসম্যান মুমিনুল (২৭), সাব্বির (২৬) ও সামিত প্যাটেল (১৭) বাদে কেউ দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারে নি। ঢাকার যেখানে ১০০ রান এসেছিল ১৩ ওভারে সেখানে রাজশাহীর শতক আসে ১৭তম ওভারে। মূলত সাব্বিরের আউটের পর ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে রাজশাহী।
শিরোপা উৎসবের দিনে বল হাতে দারুণ পারফর্ম করেছেন সাকিব আল হাসান, সানজামুল ইসলাম ও আবু জায়েদ রাহি। প্রত্যেকেই ২টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন। এছাড়া ১টি করে উইকেট গেছে আন্দ্রে রাসেল ও ডোয়াইন ব্রাভোর দখলে।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা ও সিরিজ সেরা হযেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ঢাকার স্লোগান ছিল জিতবে ঢাকা দেখবে দেশ, ঠিক তাই ই হলো, জিতলো ঢাকা দেখল দেশ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫ রানের উদ্বোধনী জুটির পর নুরুল হাসান সোহানকে হারিয়ে এগোতে থাকে রাজশাহী। ব্যক্তিগত ৫ রানে আবু জায়েদের বলে রাসেলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।
এরপরই সাব্বির রহমানকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যান মুমিনুল হক। দুজনে ৪৭ রানের জুটিতে ম্যাচের লাগাম ধরে রেখার চেষ্টা করেন। রান আউটে কাটা পড়ে ফেরার আগে ২ চারে ২২ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলেছেন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ধৈর্যশীল এক ইনিংস খেলেন সাব্বির।
এগারোতম ওভারে সাকিবের বলে এলবিডব্লিউয়ের কবলে পড়েন মুমিনুল হক। ৩০ বলে তিনটি চারে তিনি ২৭ রান করেন।
৬৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা রাজশাহীর আক্ষেপ বাড়ে ৭৬ রানে জেমস ফ্যাঙ্কলিনকে হারিয়ে।
অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিও বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারে নি।সাকিবের বলে একটি ছক্কা হাঁকানোর পর বোল্ড হয়ে তাকে প্যাভিলনে ফিরতে হয়।
স্যামির আউটের পর দ্রুত আউট হয়ে যায় ঢাকার বিপক্ষে লিগে দুই ম্যাচ জেতাতো সামিত প্যাটেল।সানজামুলের বলে অসাধারণ এক ক্যাচ ধরে সামিতকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান এন্ড্রু রাসেল।
৯১ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে পরাজয় দেখতে পায় রাজশাহী। এর মাঝে এক রানের ব্যবধানে মিরাজ আউট হলে অল আউটের শঙ্কায় পড়ে রাজশাহী কিংস।
এরআগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এভিন লুইসের ৪৫ ও সাঙ্গাকারার ৩৬ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান করে ঢাকা ডায়নামাইটস।
লঙ্কান লিজেন্ড সাঙ্গাকারা মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩৬ রান করেন।শেষ ওভারে ফরহাদ রেজার বলে আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে দুই চার ও এক ছয়ে ৩৬ রান করেন তিনি। সাঙ্গার কল্যাণে ১৫৯ রানেরে পুঁজি পায় ঢাকা।
রাজশাহীর বোলারদের মধ্যে ফরহাদ রেজা তিনটি উইকেট নেন। এছাড়া মেহেদি মিরাজ, আফিফ হোসেন, ড্যারেন স্যামি, কেসরিক উইলিয়াম ও সামিত প্যাটেল একটি করে উইকেট নেন।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে কেসরিক উইলিয়ামের প্রথম ওভারে স্লিপে দিয়ে চার হাঁকিয়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়েছিলেন হার্ড হিটার মেহেদি মারুফ।
উদ্বোধনী জুটিতে ক্যারিবীয় এভিন লুইসকে নিয়ে ২৩ রানের জুটি গড়েন মেহেদি মারুফ। মেহেদি হাসান মিরাজের করা চতুর্থ ওভারে কভারে কেসরিক উইলিয়ামের কাছে ধরা পড়েন মারুফ(৮)।
মারুফ আউট হলেও ব্যাট চালিয়ে গেছেন লুইস। আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই কভার দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে বল সীমানা ছাড়া করেন লুইস। তবে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খুব বেশি সুবিধা করতে পারে নাই অলরাউন্ডার নাসির হোসেন।আফিফের চতুর্থ বলে মিড অফে নাসিরের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন সামিত প্যাটেল।একবার জীবন পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেন নাসির।ওভারের শেষ বলে আফিফের চতুর ঘূর্ণিতে বোকা বনে যান নাসির। ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের কবলে পড়েন নাসির (৫)।
৫ ওভারে ৩৫ রানে ঢাকার স্কোর বোর্ডে নেই দুই উইকেট। এবারের বিপিএলে সফল ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক সৈকতের দিকে ভালো কিছুর জন্য তাকিয়ে ছিল ঢাকা শিবির।কিন্তু সৈকত আস্থার প্রতিদান দিতে পারলেন না।সপ্তম ওভারে স্যামির করা প্রথম বলেই প্ল্যাম এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন সৈকত (৫)।
৪২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ঢাকা ঘুরে দাঁড়ায় এভিন লুইস ও সাঙ্গাকারার ব্যাটে।চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাত্র ২৫ বলে তারা ৪১ রান যোগ করে।
ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান এভিন লুইস অসাধারণ খেলছিলেন। তবে তাকে ফেরান ফরহাদ রেজা। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে শট ফাইন লেগে কেসরিক উইলিয়ামের হাতে ধরা পড়েন লুইস। আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে আট চারে ৪৫ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন তিনি।
পরের ব্যাটসমান ডুয়াইন ব্রাভো এক ছয় আর এক চারে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নমুনা দেখিয়েছিলেন। সাঙ্গার সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝিতেরান আউটের খড়গে কাটা পড়তে হয় তাকে।মুমিনুল দুরন্ত থ্রোতে আউট হযে যান তিনি।
খেলায় ফেরে আবারো রাজশাহী কিংস। ১৩তম ওভারে ১০০ রান অতিক্রম করে ঢাকা। তবে লিজেন্ডারি সাঙ্গাকারা আর এন্ড্রু রাসেল ঢাকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে। তবে রাজশাহীর বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে সফল হয় না এ জুটি।
দলীয় ১১৩ রানের মাথায় সামিত প্যাটেলের বলে সীমানা থেকে অসাধারণ এক ক্যাচ ধরে রাসেলকে বিদায় করেন ফরহাদ রেজা। লং অফ সীমানায় বামদিকে সরে গিয়ে যখন রেজা ক্যাচ লুফে নেন, তখন তার শরীর চলে যাচ্ছিল সীমানার বাইরে। আলতো করে বল সীমানার ভেতর ছুঁড়ে দিয়ে নিজে সীমানা ছাড়া হয়ে আবার সীমানার ভেতর ঢুকে ড্রাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরেন তিনি।
ছয় উইকেটের পতনের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।ঢাকার অধিনায়ক ফাইনালেও ব্যর্থ।ফরহাদ রেজার ইয়র্ক না বুঝে খেলতে গিয়ে ক্লিন বোল্ড সাকিব (১০)।
আলাউদ্দিন বাবুও ১ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেন নি। কেসরিক উইলিয়ামের বলে ডিপ মিড উইকেটে স্যামির হাতে ধরা পড়েন তিনি।