চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাজনৈতিক সরল অংকে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত

ক্ষমতার মসনদে মজবুত হওয়া আওয়ামী লীগকে ঘিরে মহাজোট হিসেবে পরিচিত ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বাড়ছে। এমনকি ১৪ দলে যোগ দেয়ার কথা সরাসরিই জানিয়েছেন বিএনপি’র সাবেক নেতা ও নবগঠিত বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্য (বিএনএ) প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

অবশ্য এর আগেই জোটের শরিক বামদলগুলোও ইঙ্গিত দিয়েছিলো ১৪ দলে নতুন দল যোগ হবে। কিন্তু সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পৌরসভা নির্বাচনের আগে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন মহাজোট বলতে কিছু নেই।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের মৃদু সুর এখন স্পষ্ট। স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতি মাঠে থাকতে জোট থেকে বেরিয়ে গেছে ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশ। সংকট আছে খেলাফত মজলিস নিয়েও। জোট ছাড়াও খোদ বিএনপিতেই সংকট প্রকট।

এ লক্ষণ আরো স্পষ্ট হয় বর্ষীয়ান নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর বিএনপি ছাড়ার ঘোষণায়। তিনি জানান, দলে আদর্শিক-গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার অভিমানের কথা। এর মধ্যেই আবার দেখা দেয় আসল-নকল বিএনপি নিয়ে নাটকীয়তা। বিএনপি’র দাবি সরকার তাদের জোট-দল ভাঙছে।

তবে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ, ওবায়দুল কাদেরর মতো নেতারা বলছেন, বিএনপি আর তাদের জোট ভাঙার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী।

নির্বাচনী ট্রেন মিস করা বিএনপি’র বদলে বিরোধীদল হয়ে যাওয়া জাতীয় পার্টিতেও শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।

সব মিলিয়ে দুই নেত্রীর নেতৃত্বাধীন দুই দলের সরল রাজনৈতিক অংকে নতুন সমীকরণ দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তবে দল-জোটে সমীকরণ যা-ই হোক সংখ্যাগত কিছু তারতম্য ছাড়া দেশের রাজনীতিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে মনে করছেন তারা।

রাজনীতির মাঠের জোট-দলের ভাঙা-গড়া নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার এবং গণমাধ্যমকর্মী জায়েদুল আহসান পিন্টু।

শান্তনু মজুমদার বিএনপি’র ভাঙন প্রসঙ্গে বলেন, ‘শরিকদলের বেরিয়ে যাওয়া এবং দলের সাবেক নেতার বিরোধী জোটে যোগদান নিঃসন্দেহে বিএনপি’র জন্য চিন্তার বিষয়। সামরিক শাসনে একরকম ক্ষমতায় থেকেই জন্ম নেয়া বিএনপি টানা ক্ষমতায় থাকার পর এখন দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতার স্বাদ ভুলে রাজপথে সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে ব্যর্থ বিএনপি’র এখন কঠিন দুঃসময়। এ অবস্থায় যারা সুবিধা হবে না ভাবছেন তারা দল-জোট ছাড়বেন টিকে থাকতে। সেরকম কোনো নেতৃত্ব না থাকায় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি’র আর্থিক সংকটের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে’।

তবে নাজমুল হুদার ১৪ দলীয় জোটে যোগদানের বিষয়টিকে এক্ষেত্রে মেলাতে চান না তিনি। তার মতে, ‘নাজমুল হুদার ব্যাপারটি অবশ্য আলাদা। বিএনপিতে তিনি সুবিধাজনক জায়গায় ছিলেন না। রাজনৈতিক জীবনের এই পর্যায়ে এখন নাজমুল হুদা নিজের মূল্যায়ন চাইতেই পারেন’।

জাতীয় পার্টির মধ্যেও টানাপোড়েন নিয়ে শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘এরশাদের মতো করুণ পরিণতি আর কোনো স্বৈরশাসকের হয়নি। নিত্য নতুন সিদ্ধান্ত আর ততোখানি দ্রুততায় তা পরিবর্তন করে তিনি এখন ‘হাস্যকর’ ভূমিকায় চলে গেছেন। গত নির্বাচনে বিরোধীতা করেও এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আবার তার স্ত্রী প্রধান বিরোধী নেতা। এখন নিজের ভাইকে দলের কো-চেয়ারম্যান করে দলের ক্ষমতাপন্থী অংশকে কিছুটা হলেও স্বকীয় পরিচয়ে ফেরাতে চান এরশাদ’।

ভাঙা-গড়ার খেলায় প্রধান দু’টি দলে গুণগত পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করেন গণমাধ্যমকর্মী জায়েদুল আহসান পিন্টু।

তিনি বলেন, ‘দু’দল কেন্দ্রীক রাজনীতিতে এখন ভোটের ক্ষেত্রে জোট হলো একটা সাময়িক প্রভাব-শক্তি দেখানোর কৌশল। এছাড়া আর কিছু নয়। ১৪ দল, ২০ দল যা-ই হোক মূলে কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ-বিএনপিই’।

এরমধ্যে ছোট দলের জোট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা কোনো নতুন দলের জোটে যোগ দেয়াটাও শুধুই খবর তৈরি করে। রাজনীতিতে আমূল কোনো পরিবর্তন হয় না।

বিশেষ করে বিএনপি’র ভাঙন নিয়ে জায়েদুল আহসান বলেন, ‘বিএনপিতে ভাঙন নতুন কিছু নয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বিএনপি ১৯৮৩, ’৮৫, ’৮৮ তে ভেঙেছে। দলের কিছু নেতা বের হয়ে যান। বি.চৌধুরী, অলি আহমেদের মতো নেতারা বের হয়েছেন। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক আমলে ‘সংস্কারপন্থী’ মান্নান ভূঁইয়াকেও দল ছাড়তে হয়েছিলো। এসবের মূলে কিন্তু অভ্যন্তরীণ কারণই দায়ী’।

তবে সরকারও জোট ভাঙার, দল ভাঙার চেষ্টা করে। দেশীয় রাজনীতিতে তা দলের সাংগঠনিক জায়গাকে নাড়িয়ে দিলেও রাজনীতিতে পরিবর্তন আনে না।

তার মতে, ‘আসলে জনসমর্থন দাবিতে এখনো দুই নেত্রী কেন্দ্রীক রাজনীতিতে ভাঙা-গড়া বা নেতাদের চলে যাওয়া তেমন প্রভাব ফেলে না’।

জাতীয় পার্টির ভেতরকার পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতার লোভ দায়ী বলে মনে করেন দেশের গণমাধ্যম জগতের এই বিশিষ্টজন।

তিনি বলেন, ‘কার্যত ’৯১-এর আগে জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিক দল বলাই যায় না। কারণ স্বৈরতন্ত্র চলেছে ’৯০ পর্যন্ত। তবে জন্ম থেকেই দলটিতে কোনোদিন স্থিতিশীলতা ছিলো না। নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শও নেই যা অনুসরণ করবে। একদিকে গত নির্বাচনে বিরোধীতার অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় হাজির হওয়ার চেষ্টায় দলের শীর্ষ পর্যায়ে অন্তর্মূখী দুই স্রোত দেখা গেছে।

এখন চেয়ারম্যান কেন্দ্রীক দলের প্রধান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের বয়স হয়েছে। দলের বর্তমান অবস্থায় ভাই জিএস কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান বানানো দলকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাও হতে পারে। অথচ দলটির একটি অংশ যারা আগে বিএনপি ঘনিষ্ঠ ছিলো আজ তারাই আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আছে।

দলের মধ্যে ক্ষমতাবলয়ের কাছাকাছি থাকতে চাওয়া অংশটি সবসময় তৎপর। এ অবস্থায় নিজের ভাই জিএম কাদেরকে ভরসা করা ছাড়া এরশাদের আর কোনো উপায়ও ছিলো না’।