বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে’র সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার জাতির সামনে দলটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধতার কারণ অপসারণে কোন ভূমিকা নিচ্ছেন না। অনেকের প্রত্যাশা ছিলো তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়ে দলকে গঠনতান্ত্রিক শৃঙ্খলায় আনবেন। শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে দলের বিপজ্জনক পন্থাযাত্রা ঠেকাবেন। মানুষ ভেবেছিলো তিনিই হবেন আওয়ামী লীগে’র রাজনৈতিক ফাটাকেষ্ট।
কিন্তু বাস্তব চিত্রে ফুটে উঠছে কেবলই নতুন নতুন বচনবাজী। একবার বলেন, দলে হাইব্রিড নেতা ঢুকেছে পরে বলেন, মৌসুমী পাখি ঢুকেছে। আরেকবার বলেন, কাউয়া ঢুকেছে, কিছুূদিন যেতে না যেতেই আবার বলেন, ফার্মের মুরগী ঢুকেছে।
দলের বিভিন্ন সভায় তিনি জোরালো কণ্ঠে বলেছেন, হাইব্রিড নেতাদের দলে ঠাঁই নেই। শুধু বক্তৃতা পর্যন্তই হাইব্রিডরা বহাল তবিয়তে থেকে গেল। এরপর আরও সংযুক্ত হল মৌসুমী পাখি। তিনি বললেন, দলে মৌসুমী পাখিদের কোন জায়গা নেই। তাও বক্তৃতা পর্যন্তই। মৌসুৃমী পাখিরা বহাল তবিয়তে তাদের জায়গায় বসে থাকল। এরপর নতুন করে সংযুক্ত হল কাউয়া। তিনি আওয়ামী ডাল হতে কাউয়াদের উড়ে যেতে বাধ্য করবেন বললেন। তাও বক্তৃতা পর্যন্তই কাউয়ারা বহাল তবিয়তে ও নিরাপদে বাচ্চা ফুটিয়ে চলছে।
নতুন করে সংযুক্ত হল ফার্মের মুরগি। হয়তো ভবিষ্যতে তিনি জাতির সামনে আরও নতুন নতুন উপাধি উপস্থাপন করবেন।তদ্রূপ অনুযায়ী নেতাদের উপস্থিতিও থাকছে তার দলে।এছাড়াও রয়েছে জামায়াত শিবির ও বিএনপি হতে আসা অনুপ্রবেশকারীগণ। আরও আছে রাজাকারের পুত্রকন্যাগণ। রয়েছে হেফাজতের ধর্মান্ধ কাঠমোল্লাগণ। রয়েছে শত্রুকে বুকে টেনে মিত্রকে দূরে ঠেলার আত্মঘাতী রীতি।
যে হেফাজত ২০১৩ সালের ৫ মে সরকারকে ফেলে দেয়ার নীল নকশা করেছিল। সেই হেফাজতের সঙ্গে আপোষকামিতায় আওয়ামী লীগে’র প্রধান মিত্র ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোও ক্ষুব্ধ হল। ক্ষুব্ধ হল বাম প্রগতিশীল, সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতেই ১৪দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। বিএনপি জামায়াতের সাম্প্রদায়িক জোটের শাসনামলে এই জোটের নেতারা অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই, মুফতি হান্নান সহ অনেক জঙ্গী ও জঙ্গী সংগঠনের পয়দা হয়েছে চারদলীয় জোটের সাম্প্রদায়িক শাসনামলেই।
১৪ দলীয় জোটের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি হেরে গেলে হেরে যাবে দেশ, হেরে যাবে মানুষ, হেরে যাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় রাজনীতির টিকে থাকা। রাজনৈতিক অঙ্গনে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি ভয়াবহ দূর্ঘটনার জন্ম দেয়। দেশ স্বাধীনের পরে আওয়ামী লীগ হতে বেরিয়ে গঠিত হয় জাসদ, চলে গণবাহিনীর নাশকতা, সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির শ্রেনী শত্রু খতমের হঠকারী রাজনীতি, আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের লুটপাট ,ক্ষমতার অপব্যবহার বিশৃঙ্খলা দমন করতে বাধ্য হয়ে চলে বাকশাল গঠন প্রক্রিয়া।
আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ বাকশাল গঠনের পক্ষে ছিল কেউ বিপক্ষে ছিল। এলো ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষ, বাসন্তির জাল পরে লজ্জানিবারণের চেষ্টা বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগে’র ভেতরে ক্রিয়াশীল থাকে মিত্রবেশে শত্রুতার পরিকল্পিত ও চতুর কর্মপ্রক্রিয়া। খোদ বঙ্গবন্ধুও কতিপয় দলীয় নেতাদের চাটার দল বলেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির অনুরূপ বর্তমানেও চরমভাবে ক্রিয়াশীল রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের নামে এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আরেক মুক্তিযোদ্ধার মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র ও অভিযোগ বাণিজ্য চলছে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা সহযোদ্ধাদের কাছ হতে উৎকোচ পেলে অভিযোগ প্রত্যাহার আর উৎকোচ না পেলে অভিযোগ বহাল রেখে চলছে। দেশজুড়ে এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আরেক মুক্তিযোদ্ধার মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে চলছে। এবার মাছে ভাতে বেঁচে থাকা বাঙালির মাছ গেল, ভাতও গেল। হাওরপাড়ে নেমে এসেছে হাহাকার। ফসল রক্ষা বাঁধের বরাদ্দ আত্মসাত করল চাটার দল। আর ধান ডুবল কৃষকের। ভাতের উৎস ধান হারিয়ে মানুষ যখন মাছ নিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজল তখনই মাছেও মড়ক লাগল। হাওরের পানি দূষিত হয়ে গেল।মড়ক দেখা দিলো জলে ভাসমান হাঁসের দলে। হাওরপাড়ে দেখা যায় হাঁসখামারিদের করুন বিলাপ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হল। এগুলো বাংলাদেশের রাজনীতির বিশাল অর্জন। অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডও হল। সবকিছুকে ম্লান করে দিতে দলের ভেতরে বাইরে কুটিল চক্রান্ত চলছে। মানুষ ভেবেছিলো ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এসব প্রতিরোধ করবেন। দলকে, রাজনীতিকে অনেকাংশে আবর্জনামুক্ত করবেন। কিন্তু পেরেছেন কী? কেবল নতুন নতুন উপাধি ও বয়ান ছাড়া জাতিকে কিছুই দিতে পারেননি তিনি। ইচ্ছে করেই দিচ্ছেন না, না দিতে পারছেন না? তার চটকদার মন্তব্যে সাংবাদিকরা আমোদিত হন, পাঠকরা আমোদিত হন। কিছুূদিন পরপর জাতিকে চমকপ্রদ ও কৌতুককর বক্তব্য উপহার দেন তিনি। তার এই বক্তব্যগুলো কি দেশের কোন কাজে লেগেছে মিডিয়ার শিরোনাম হওয়া ছাড়া?
এসবেরতো নূন্যতম কোন কার্যকরিতা নেই কোথাও। তিনি দলের সাধারন সম্পাদক, তার দলে হাইব্রিড, মৌসুমী পাখি, কাউয়া ও ফার্মের মুরগি ঢুকবে এর জবাব কি অন্যরা দেবে? তিনি তা জানেন তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না কেন?
হাইব্রিড,মৌসুমী পাখি,কাউয়া ও ফার্মের মুরগিদের দল থেকে বের করে দিলেইতো জঞ্জালমুক্ত হয়। আর নতুন করে অনুপ্রবেশের পথ বন্ধ করে দিলেই হয়। কেন তিনি তা করছেন না? নাকি তিনি তা পারছেন না? না পারলে, কেন পারছেন না? এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা দরকার। মানুষ দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্দুল জলিলকে দেখেছে, জিল্লুর রহমানকে দেখেছে, সৈয়দ আশরাফকে দেখেছে। এখন দেখছে ওবায়দুল কাদেরকে। অনেক প্রত্যাশা ছিল তার প্রতি। প্রত্যাশার এমন করুণ ও অকাল মৃত্যু হবে তা কেউ ভাবেনি। বক্তব্যকে বাস্তবতার কাছাকাছি না নিয়ে ওবায়দুল কাদের হয়তো সেরা চটকদার বক্তব্যের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঠাঁই করে নিতে পারবেন। এর বেশি কিছু না। তিনি শুধু বলবেন আর সবকিছু চলবে, যেমন চলছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)