মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যে ‘ঝগড়া’ না করার পরামর্শ দিয়েছেন অং সান সু চি। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সংঘাতপূর্ণ রাখাইন পরিদর্শনকালে তিনি এই পরামর্শ দেন।
টেলিগ্রাফ জানায়, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা নাগরিক প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এখনো প্রতিদিন অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।
রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতনসহ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে খুন, ধর্ষণের মত ঘটনাও ঘটায় তারা।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ সোচ্চার থাকলেও নীরব থাকেন অং সান সু চি। এতে আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি।
তবে শেষ পর্যন্ত রাখাইন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন সু চি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তে থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে মংডুর উদ্দেশ্যে রওনা হন। এই মংডুতেই হাজার হাজার রোহিঙ্গা জাতিগত নিধনের শিকার হয়েছেন।
মংডু পরিদর্শনকালে তিনি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ইমামের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে উপস্থিত এক ইমামের বরাত দিয়ে আরাকান প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপের ক্রিস লিওয়া বলেন, মংডুতে গিয়ে সু চি সড়কপথে রোহিঙ্গাদের এলাকায় যান। তিনি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় জড়ো হওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
সবার উদ্দেশে তিনি তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- তাদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হবে, সরকার তাদের সহায়তা করবে এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করা উচিৎ নয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।