ধর্মীয় বিশ্বাস, রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া বিশ্বাস, রাজনৈতিক বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক বিশ্বাস, বিজ্ঞানের বিশ্বাস, ইত্যাদি নানা ধরনের বিশ্বাস নিয়ে আমাদের এই দুনিয়ায় বসবাস। কোন সমাজে শিক্ষা বা জ্ঞানের আলো যখন কম, যেখানে নিজের যুক্তি আর কাজ করে না তখন ধর্মীয় বিশ্বাস, রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া বিশ্বাস খুব শক্তিশালী হয়। এটা এতটাই শক্তিশালী হয় যে তা সকল বিশ্বাসকে ছাপিয়ে যায়।
তাই ধর্মীয় বিশ্বাসে কেউ আঘাত করলে ঐরকম সমাজের মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠতে পারে ক্ষ্যাপা কুকুরদের মতো। ক্ষ্যাপা কুকুরকে তখন সমাজের সবাই মিলে মেরে ফেলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তবে বেওয়ারিশ কুকুর বা অভিভাবকহীন রাস্তার নেড়ি কুত্তাগুলো নিধন করা স্থানীয় সরকারের দায়িত্বের মধ্য পড়ে। আমাদের সমাজে এটা চালু প্রথা বা স্থানীয় সরকার আইনের মধ্যে পড়ে। অপরদিকে বাংলাদেশের আইনের দণ্ডবিধির ৯৬ ধারায় উল্লেখ আছে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে কৃত কোন কিছু অপরাধ নয়।
যা হোক, প্রায় সব দেশেই বন্য প্রানী সংরক্ষণ আইনে পশু পাখি মারা নিষেধ। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। বাদুড় যেমন নীপা ভাইরাস ছড়ায় ঠিক তেমনি জলাতঙ্ক রোগের অন্যতম কারণ ক্ষ্যাপা কুকুর। আর যে কোন ঘরে বা আঙ্গিনায় হানা দিয়ে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করে রাস্তার নেড়ি কুত্তাগুলো। সমাজ বা নগরবাসী হয় অতিষ্ঠ। কারণ এই কুকুরগুলোর স্বভাব চরিত্র খুব খারাপ। নেমকহারামী এদের রক্তের প্রতিটি কণায় কণায়, তাই কারো পালিত কুকুরও হ’তে পারে না ওরা। পায় না সমাজের মানুষের ভালোবাসা, করুণা; পায়না নগর কর্তাদের কৃপা। তাই তাদের বেঘরে প্রাণ দিতে হয় স্থানীয় সরকারের কর্মীদের হাতে। কারণ জনগনের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পরে ২০১৩ সালে গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ। বিএনপি, জামাত, এরশাদের দল এর একাংশ ও অন্যান্যরা এবং অরাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সমর্থকেরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এরা যেহেতু সরকারের বিপক্ষে এবং গণজাগরণ মঞ্চের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বা যুদ্ধাপরাধের বিচার সমর্থন করে না তাই তারা বিশাল অংকের টাকা খরচ করে বিশাল সমাবেশ করে ধর্মীয় উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে। পরে চৈনিক বামদের দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মধ্য ভাঙ্গন ধরানো হয়, যাতে বিচার প্রভাবিত করা যায়। দেশী নষ্ট বুদ্ধিজীবারা গণজাগরণ মঞ্চের লাকী নামের বজ্রকন্ঠী নিরীহ মেয়েকে প্রায় ‘বেশ্যা’ বানিয়ে ছাড়ে। একাজে খরচ হয় কত টাকা তা অনুমান করতে কিছু তথ্য দিই।
আমাদের দেশে মসজিদ মাদ্রাসা চলে অনুদানের টাকায় মানে মানুষের দেওয়া জাকাত, ফেৎরার টাকায়। হিসেবের অংকে যার পরিমান খুব বেশী না। সেই মাদ্রাসার নেতারা সারাদেশে হেলিকপ্টার নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ই মে, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি/ সমাবেশের প্রচার করে, মিথ্যা কথা বলে তালেবে এলেমদের ঢাকায় নিয়ে এসে করে বিশাল সমাবেশ। এর কিছু টাকা আসে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ থেকে, যা পরে দেশে বিদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বাম ঘরণার সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রীকে ‘বেশ্যা’ বানানোর জন্য কলাম লিখে ছাপে জনপ্রিয় পত্রিকায়।
ধর্ম অবমাননাকর কিছু অতিবামের ফরমায়েশী লেখা কলামের লাখ লাখ সিডি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় মানুষকে উত্তেজিত করতে। ব্যাপারটা এমন যে, ধর্মের অবমাননা অপরাধ কিন্তু অবমাননা ছিল তখনকার দিনে মুষ্টিমেয় লোকদের মাঝে। কারণ তখন মানুষ ব্লগারদের ভালমতো চিনতো না, তাই তারা কোথায় লেখে তাও জানত না। বিশেষ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাহেব সেই সব সল্প প্রচারিত ধর্ম অবমাননাকারী লেখাগুলো সিডি করে সারা দেশে বিতরণ করলেন! সেটা কি সমান অপরাধ নয়! এমন কি সেই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবিকে সাইদীর মুক্তি আন্দোলন বলে চালিয়েছিল যার দরুন দেশে হাংগামা বাঁধিয়ে শত শত লাশ ফেলে দেয় মানুষের।
২০১৩ সালের ৫ মে, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং ঢাকার মতিঝিলে তাদের দ্বিতীয় সমাবেশের আয়োজন করে। ৫ ও ৬ই মে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে এই সংগঠনের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে বহু হেফাজতে ইসলামের কর্মী, পুলিশ, বিজিবি সদস্যসহ মোট ৪৭ জন নিহত হয় এবং সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আহত হয়। হেফাজতীদের তান্ডবের কথা কে না জানে। সেটা নিয়েও চলে ব্যাপক ষড়যন্ত্র। বিএনপি জনগণকে মাঠে নেমে আসতে বলে, কিন্তু মানুষ নামে নি। এর পরে সরকার হেফাজতীদের সমাবেশস্থল ত্যাগে বাধ্য করে। যা নিয়েও চলে মিথ্যাচার। মানবাধিকারের নামে এইসব মিথ্যাচার করা হয়।
জীবিতদের মৃত বলে বলা হয় সরকার গনহত্যা করেছে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ভাঙ্গতে। এই প্রক্রিয়ার যুক্ত হয় চীনা, পাকঘরনার রাজনীতিক আর পালিত বুদ্ধিজীবী, নেতৃত্বে থাকে মানবাধিকারকর্মী নামের কিছু নষ্ট মানুষ বা নষ্ট মানুষের সন্তান যারা রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া বিশ্বাস থেকে কখনো বাংলাদেশ ও বাংলেদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা মানবাধিকারকে আমাদের মৌলিক অধিকারের উপরে স্থান দিতে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক সক্রিয়। সদ্য কারামুক্ত এক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন যে তার মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। তিনি দেশের সংবিধান থেকে নানা ধারা উপধারা তুলে ধরেন।
এসব শুনে আমার এক বন্ধু বলেন, ‘হ্যাঁ ঠিক, আমাদের দেশে বন্য প্রানী সংরক্ষণ আইনে পশু পাখি মারা নিষেধ। কিন্তু যখন কোন পশু ক্ষেপে গিয়ে মানুষের জান্মালের ক্ষতি করে তখন দেশের মানুষ বা সরকার উভয়েই ঐ ক্ষ্যাপা প্রাণীকে হত্যা করার বৈধ অধিকার লাভ করে, সেটাও সত্য, আইনত বৈধ। কারো জানমালের ক্ষতি করে বা একজনের মৌলিক অধিকার হরণ করে আরেকজন মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে না’।
একটু পিছন ফিরে দেখলে দেখা যায় যে, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি বিষয়ে পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তা দের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলে – এমন অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক। সারা দুনিয়ায় হৈ চৈ পড়ে যায়। দেশের অবস্থা খুব টালমাটাল হয়ে পড়ে। চীনা, পাকঘরনার রাজনীতিক আর পালিত বুজদ্ধিজীবীরা দেশপ্রেমে গদ গদ হয়ে নানা দাবী করতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের একজন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। একজন সচিবকে নেওয়ায় হয় জেলে ।
দেশের সব নামী দামী পত্রিকা এবং চীনা, পাকঘরনার রাজনীতিক আর পালিত বুদ্ধিজীবীরা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জন্য উঠে পড়ে মানে খেয়ে না খেয়ে নেমে পড়ে। এই দলে যোগ দেয় ২০০৭-৮ এ তত্ত্বাবধায়কের সময়কার ষড়যন্ত্রকারী বিশেষ পত্রিকার সম্পাদকরা বিশ্ববরেণ্য (!) শান্তি দূতেরা। তাই বলির পাঠা হন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী। তখন ঢাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা ছিলেন একজন পাকি। সেই পাকি অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরের ইন্ট্রিগ্রিটি বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। অভিযোগ আছে এটা নিয়ে কাজ করেছিলেন বিশ্বব্যাংকের ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট ও সেখানকার ইন্ট্রিগ্রিটি বিভাগের কয়েকজন। অবশেষে এই অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনার সরকার মুক্তি পায়,কানাডার আদালতের রায়ের মাধ্যমে যা সারা দুনিয়ার আলচ্য বিষয় হয়েছে আজ ৩ থেকে ৪ দিন।
বাংলাদেশের যে সব চীনা, পাকঘরণার রাজনীতিক আর পালিত বুদ্ধিজীবী তখন সরকারকে চরম বেকায়দায় ফেলে বিদেশী প্রভুদের খুশি করে ক্ষমতার মসনদ দখল করতে চেয়েছিলেন এখন তারা চরম দেশ প্রেমিক হিসেবে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছে। কানাডার আদালতের রায় বিশ্বব্যাংকসহ বাংলাদেশের চীনা, পাকঘরনার রাজনীতিক আর পালিত বুজদ্ধিজীবীদের মুখে যে চপটাঘাত করেছে তা বিশ্বব্যাংকের পদ্মাসেতু থেকে অর্থ প্রত্যাহারের অপমানের চেয়ে হাজারগুণ বেশী। তাই এই পরামর্শ একধরণের ‘বাচ্চামী’ ছাড়া আর কিছুই না। এই সব দুষ্টু বুদ্ধিজীবী আর রাজনীতিকদের শিশুসুলভ কর্মকাণ্ড দেখে হাসি পায় আমার।
শিশুর কথা বলতে মনে পড়ল মিডিয়ার কোন একখানে দেখা এক দুষ্ট ছেলের গল্পের কথা। ‘ছেলেটা এতই দুষ্ট ছিল যে তার দুষ্টামিতে সবাই বিরক্ত। কখন কি কাণ্ড ঘটাবে সে দুশ্চিন্তায় অস্থির থাকতেন তার মা বাবা! এক দিন মা তার সেই ছেলেকে নিয়ে গেছেন ডাক্তারের কাছে। সেখানে গিয়েই সে যখন তার দুষ্টামি শুরু করল তা দেখে ডাক্তার তাড়াতাড়ি তাকে পাঠিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ এক বুড়া শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে। সেখানে যাওয়ার পর ডাক্তার যখন তাকে বসতে বলেন সে বলে আমি বাথরুমে যাব। এখন বাথরুমে গিয়ে সে তার জামা কাপড় খুলে ফেলে মায়ের সামনে বসে পড়ে! এদিকে ছেলে যেহেতু বিবস্ত্র আর চায় না কাপড় পরতে মা বেচারি তাকে ডাক্তারের রুমেও নিয়ে যেতে পারছেন না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ডাক্তার এসে বললেন, ঠিক আছে কাপড় পড়তে হবে না। এভাবেই চলো।
ডাক্তার তার রুমে এনে চিকিৎসা সেরে যাওয়ার সময় বললেন, আমার নিয়ম হল কেউ কাপড় খুলার জিদ ধরলে বাড়ী যাওযার সময় কাপড় ছাড়াই যেতে হয়। সে দিন ছেলের মা অনেকটা বাধ্য হয়েই সে ছেলেকে উলঙ্গ অবস্থায় নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। আর নিজের দুষ্টামির কারণে সে দিন সেই উলঙ্গ অবস্থায় বাড়ী ফিরায় যে অপমান ও বিব্রত অবস্থায় তাকে পড়তে হলো তার পর থেকে ঐ ছেলে আর কোন দিন দুষ্টামি করে নাই’।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)