ধ্বংসাত্মক রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পুনর্বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একইসঙ্গে এই প্রকল্প নির্মাণ দেশ, দেশের মানুষ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক আত্মঘাতি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সিরডাপ অডিটোরিয়াম ‘রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে কী ক্ষতি হবে তা স্পষ্ট। তবুও সরকারের সমস্যা কি? সরকার কি বধির? না বধির নয়। জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে জাগাতে হবে।
এক্ষেত্রে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। বড় দলের অহমিকা ছেড়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে হবে। বিএনপি যদি দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের ইচ্ছা থাকে তাহলে বিএনপিকে বড় দলর অহমিকা কাটিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত বুদ্ধিমতি ও কৌশলী রাজনীতিবিদ মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবকিছু বেশ সুন্দরভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রায় সবক্ষেত্রে তিনি সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভারতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ভারতে যাওয়ার সময় তিনি অনেক উপঢৌকন নিয়ে যান। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর। কিন্তু ভারতে তার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে গেছে। তাই দেশে ফিরেই তিনি হেফাজতের মন জয় করে নিলেন। তাই আশা করবো একই বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি ধ্বংসাত্মক রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পুনর্বিবেচনা করবেন।
তবে এই প্রকল্পের শুরু থেকেই বিএনপি ও বাম দলগুলোর বিরোধিতার ফলে রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দু:শ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে এর আগে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে যারা ওই প্রকল্পটির বিরোধীতা করছে, তাদের ওই প্রকল্প বিষয়ে তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যকে ‘কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ থেকে গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় অর্ধদিবস হরতালেরও ডাক দিয়েছিলো তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় সমন্বয় কমিটি। সেই হরতালে অবশ্য বিএনপির সমর্থন ছিলো।
এর পর থেকে চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শনিবারের এই আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দাজা চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মোঃ ইব্রহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণমোর্চার প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী প্রমুখ।