২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর – এই চার দিন ধরে ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে দীর্ঘ বৈঠক করে সংস্থাটির মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা কমিটি (আইএসি)। বৈঠক শেষে আইএসি ঐতিহাসিক দলিলের বৈশ্বিক ঐতিহ্যের তালিকা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ নতুন ৭৮টি মনোনয়ন যোগ করার সুপারিশ করে, যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ একটি।
২০১৬-২০১৭ সালের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নিজ নিজ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে স্বীকৃত দলিলাদি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল আইএসি’র কাছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল আর্কাইভসের মহাপরিচালক ড. আবদুল্লাহ আলরাইসিকে প্রধান করে তার অধীনে ১৪ প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত আইএসি দালিলিক ঐতিহ্য হিসেবে সেই রেকর্ডগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে টানা দু’বছর।
নতুন সংযোজনের তালিকা চূড়ান্ত করার পর ৩০ অক্টোবর এর ঘোষণা দেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বকোভা।
ঘোষণা দিয়ে বকোভা বলেন, ‘আমার গভীর বিশ্বাস, মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড কর্মসূচি দালিলিক ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হওয়া উচিত, যেন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংলাপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পারস্পরিক বোঝাাপড়া এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার চেতনা তাদের মনে লালন করতে পারে।’
১৯৯২ সালে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম চালু করে ইউনেস্কো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দালিলিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সচেতনতার তাগিদে এটি চালু হয়। যুদ্ধ ও সামাজিক অস্থিরতা, সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে দালিলিক ঐতিহ্য নিয়ে সমস্যা বেড়ে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংগ্রহশালা নষ্ট হয়েছে। লুটপাট, অবৈধ বিক্রি, ধ্বংস, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও বরাদ্দের কারণে নষ্ট হয়েছে দলিল। অনেক দলিল নষ্টের ঝুঁকিতে।
তাই এবারের নতুন সংযোজনের পর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউনেস্কো মহাপরিচালকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যেন ২০১৮-তে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাহী বোর্ডের ২০৪ তম অধিবেশনে পুরো কর্মসূচি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিভিউ প্রকাশ করা হয় এবং ঐতিহাসিক সেসব দলিল সংরক্ষণে একটি কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া এমওডব্লিউ কর্মসূচি যেন সব ধরণের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বাইরে থেকে পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্মান পায়, সেদিকেও খেয়াল রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বর্তমানে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড তালিকায় বিভিন্ন দেশের মোট ৪২৭টি ঐতিহাসিক দলিল স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাথর ও কাঠে খোদাই করা নিদর্শন থেকে শুরু করে কাগজ, চামড়া ও সেলুলয়েডে লেখা এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল দালিলিক ঐতিহ্য।