শুক্রবার দুপুর বারটা । রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা বাংলাদেশ টেলিভিশন পর্যন্ত থমকে আছে সারি সারি গাড়ি। নড়াচড়ার নামগন্ধ নেই। তীব্র ভোগান্তিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে বসে আছে হাজারো মানুষ।
সাধারণত, শুক্রবারের বিকাল তিনটা পর্যন্ত রাস্তা ফাঁকা থাকে। আজ কী এমন হলো যে বৃহস্পতিবারের মতো যানজট? রবিউল আলম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। গাড়ি আগায় না। জরুরি কাজ ছিল। এখন না পারব কাজটা করতে না পারব বাসায় ফিরতে। মধ্যপথে আটকে থাকতে হয় বলে শুক্রবারে বের হয়েছি। কে জানে জ্যাম এখন শুক্র-শনি মানে না?’
যানজটের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কুড়িল থেকে বাড্ডা হয়ে মেরুল আসতে হলো। হাতির ঝিলের পূর্বপ্রান্তে (বিটিভি ভবনের উত্তরপাশে) রাস্তায় ওয়াসার কাজ চলছে। রাস্তা কেটে পাইপ বসানো হচ্ছে। যানজটের কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন, ‘ওয়াসার কাজ চলছে। এর জন্য রাস্তায় ওয়াসার গাড়ি ফেলে রেখেছে। রাস্তার বেশিরভাগ দখল হয়ে যাওয়ায় একটা একটা করে গাড়ি পার হচ্ছে। এজন্য এত বড় জ্যাম।’
একটু এগিয়ে দেখা গেল, খানাখন্দে ভরপুর রাস্তা ভরাট করছেন ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য। যান চলাচলের সুবিধার জন্য ভ্যানে করে ইট-পাথর এনে খালে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।
পাশেই ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) শিকদার আবদুস সালাম। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘রাস্তা খুঁড়ে যে পানি উঠেছে সেই ফেলেছে রাস্তার উপর। দীর্ঘদিনের গর্তে পানি জমে কাদা হয়ে গেছে। গাড়ি চলতে পারছে না। তার উপর রাস্তা কাটার মেশিন ফেলে রাখা হয়েছে। একটা একটা করে গাড়ি যাচ্ছে। আমাদের লোকেরা পাবলিকের গালি খাচ্ছে আবার কষ্টও করছে। এখন নিজ পকেটের টাকা দিয়ে লেবার ভাড়া করে মাটি এনে পুলিশই সেই মাটি টেনে গর্ত ভরাট করছে।’
আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাজও পুলিশকে করতে হয়। ওয়াসার কাজও পুলিশকে করতে হয়।
ঠিকাদার খালিদ হাসানকে রাস্তায় পানি ফেলার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় পানি পড়ে ভেসে গেছে এটা সত্য। কিন্তু আমাদের ইচ্ছায় এটা হয়নি। আমরা ওয়াসার পাইপ স্থাপন করছি। হাতিরঝিল সোজা এসে রাস্তা খুঁড়তে খুঁড়তে যে পাইপ পাওয়া গেছে সেটা ছিল নিম্নমানের ছিদ্র পাইপ। মাটি সরাতেই পানি উপচে পড়তে শুরু করে। অনেক কষ্টে বন্ধ করা হলেও ততক্ষণে রাস্তা ভেসে যায়। এখন আমরা সতর্কতার সাথে কাজ করছি।
শীতকালে রাস্তা বর্ষাকালের রূপ ধারণের ঘটনা জানেন না স্থানীয় কাউন্সিলর ও ঢাকা সিটি উত্তরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওসমান গনি। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। রাস্তায় কাজ করতে গেলে যানজট তো হবেই। তারপরও আমি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলছি। আজ শুক্রবার বলে তাকে হয়তো পাওয়া যাবে না। কাল আবার ব্যস্ত থাকবো মেয়র সাহেবের জানাজার কাজে। এর মধ্যে সুযোগ পেলেই আমি খোঁজ নিব।