চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

যদি নাসির থাকতো!

দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে ইমরুল-মুশফিক-মুমিনুল থাকছেন না। ভিনদেশে ভিন্ন আবহাওয়াতে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের জন্য এরচেয়ে বড় পরীক্ষা মনে হয় না আর এসেছে। প্রথম টেস্টে দারুণ শুরু করেও ইনজুরির পাহাড় মাথায় নিয়ে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে টাইগারদের। ফেসবুকে অভিনন্দন আর গালি-নন্দন দুই’ই সইতে হয়েছে টাইগারদের। তবে যারা ক্রিকেট খেলেছে আর ক্রিকেটের সঙ্গে মাঠে থেকেছে, তারা জানেন ‘বাতাস’ কতো বড় একটা বিষয়; তাও যদি হয় বিশ্বমানের কোনো প্রতিযোগিতায়। সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রথম টেস্টে টাইগারদের লড়াইকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান জানাই।

দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলে কে কে খেলবেন, কেমন খেলবেন, কাকে কাকে ভাল খেলতে হবে, কে আউট হলে দল চাপে পড়বে এমন নানা সমীকরণের সহজ সমাধান খুঁজে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তবে সাধারণ একজন সমর্থক হিসেবে আমার ধারণা বাংলাদেশ অতটা খারাপ করবে না, যতটা সবাই আশঙ্কা করছে। ফর্মে থাকা খেলোয়াড়রা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করবেন আর ফর্ম খুঁজতে থাকারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

টাইগারদের অতীত পরিসংখ্যান ঘা‍ঁটলে দেখা যায়, এমন পরিস্থিতিতে অনেক অপ্রত্যাশিত ম্যাচ ও সিরিজে দারুণ ঘুরে দা‍ঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান বা মোস্তাফিজুর রহমান যখন টপ ফর্মে থেকে ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে সিরিজ-টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন, তখনও বাংলাদেশ ওইসব ম্যাচ-সিরিজ জিতেছে।

হোম সিরিজের যাবতীয় সুবিধা মাথায় রেখে নিউজিল্যান্ড তাদের রণপরিকল্পনা সাজিয়েছে। ম্যাচের আগে মাঠে পানি ঢালা থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছে। এর সঙ্গে প্রচণ্ড বাতাসে নিউজিল্যান্ড পেসারদের বাউন্সার সামলে টাইগারদের লড়াই করতে হচ্ছে। জয়-পরাজয়ের বিচারে বাংলাদেশ হয়তো পিছিয়ে, কিন্তু ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত নৈপূণ্যের দিক থেকে কোনো অংশেই কম না টাইগাররা। বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্টে সাকিবের ডাবলসহ মুশফিকের শতক নিউজিল্যান্ডের মাঠে রেকর্ড। দুই ডেবুট্যান্ট বোলার রাব্বি ও শুভাশিষ নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ঘাম ঝরিয়েছে সমান তালে। দেশের মাটিতে চমক দেখানো মিরাজ-সাকিবদের ঘূর্ণি বল খুব একটা চমক দেখাতে না পারলেও একেবারে ছেড়ে দেননি তারাও।

এতোক্ষণ যা লিখলাম, তার সবই সদ্য পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। ভবিষ্যত ম্যাচের কথা চিন্তা করে যে শঙ্কা আর হতাশা কাজ করছে, তাতে একটি নাম বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি ‘নাসির হোসেন’। তিনি বরাবরই আলোচিত ও কার্যকর খেলোয়াড় হিসেবে টাইগার স্কোয়াডে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজে একরকম ভক্ত-দর্শকদের চাপে-আগ্রহে দলে জায়গা করে নিয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। তারপরও কী এক অজানা কারণে তিনি দলে নেই! যদিও নানা ব্যাখ্যা এসেছে বিসিবির পক্ষ থেকে।

টাইগাররা যখন অস্ট্রেলিয়া হয়ে নিউজিল্যান্ড সফর করছে, নাসির তখন দেশের মাটিতে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখে চলেছেন। রংপুর বিভাগের হয়ে ঘরোয়া খেলায় ব্যাটহাতে জোড়া শতকসহ প্রয়োজনে বল হাতেও ঝলসে উঠেছেন, গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। এমন ফর্মে থেকেও কেন দলে নেই, তা নিয়ে ভক্ত-সমর্থকরা বিস্মিত। নাসির হোসেনের পাশাপাশি বিসিবির বিচারে বয়স্ক হয়ে যাওয়া অলোক কাপালি ও শাহরিয়ার নাফিসের পারফরম্যান্সও ছিলো চোখে পড়ার মতো।

এইযে এতো কথা, মুশফিক-ইমরুল-মুমিনুল ইনজুরিতে না পড়লে হয়তো বলা হতো না। সৌম্য-রিয়াদরা প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠলেও হয়তো কথা উঠতো না। মোস্তাফিজ না থাকায় রুবেল-মিরাজ-সাকিবরা নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মড়ক লাগিয়ে প্যাভিলিয়নে পাঠাতে পারলেও কথা হতো না। কিন্তু পরিস্থিতি অন্যরকম, সেজন্য এই ইনজুরি আক্রান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টাইগারদের বড় ম্যাচের আগে শুধু একটি কথাই মনে হচ্ছে…”ইস! যদি নাসির থাকতো!”

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)