এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করায় ফোরজি সেবা পিছিয়ে যাবে এবং টেলিকম খাতে অপারেটরদের ওপর চাপানো করের বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ গ্রাহককেই বহন করতে হবে বলে আশঙ্কা করছে দেশের মোবাইলফোন অপারেটররা।
বহুবার সুপারিশের পরও সিম ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হওয়া, ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট থেকে যাওয়া এবং টেলিযোগাযোগ কাঠামোয় বাড়তি কর আরোপ করায় হতাশা প্রকাশ করেছে দেশের মোবাইলফোন সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটর্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামটব)।
আজ বুধবার বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের বাজেট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সংগঠনটি। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল টেলিকম শিল্পের ওপর বাড়তি ব্যয় আরোপ এবং বাজেট পেশের আগে তাদের সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা।
অ্যামটবের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন,‘এবারের বাজেটে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির জন্য সম্ভাবনা এবং সমস্যা দূর করার কোনো দিকনির্দেশনা নেই।’
বর্তমান সময়ে বাজেটের কিছু প্রস্তাবনা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে অ্যামটব।
সংগঠনটির মহাসচিব বলেন,‘ ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তবুও দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ এখনো ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত।এরকম বাস্তবতায় সিম ট্যাক্সের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা অসময়োপযোগী।’
সামনে ফোরজি আসছে। সরকার এবছর মোবাইল ফোন আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করায় এ সেবা চালুতে ধীর গতি আসবে বলে উদ্বেগ জানান বাংলা লিংকের কর্পোরেট এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান কর্মকর্তা তৈমুর রহমান।
তিনি বলেন,‘এখন দেশে ফোরজি হ্যান্ডসেট ব্যবহারের হার মাত্র ৪ শতাংশ। এই অবস্থায় বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আমদানি শুল্ক এবং ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের যন্ত্রাংশের আমদানির ওপর কর বাড়িয়ে দেয়াটা আমরা প্রত্যাশা করিনি।’
অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের তুলনায় মোবাইল অপারেটরগুলোর ওপর কর্পোরেট ট্যাক্সও বেশি চাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে অ্যামটব। বক্তারা জানান, ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স এখাতে বিদেশী বিনিয়োগ অনুৎসাহিত করছে। এরকম পরিস্থিতি দূর করতে হলে অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মতো ৩০-৩৫ শতাংশ কর্পোরেট কর ধার্য করার প্রস্তাব করেছে তারা।
অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ইন্টারনেটের দাম বেশি রাখছে এমন আলোচনার জবাবে অ্যামটব জানায়, এব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কস্ট মডেলিং করবে। এতে দাম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জবাব মিলবে।
মোবাইল ফোন অপারেটররা সম্মিলিতভাবে জিডিপি-তে ৬ শতাংশ অবদান রাখছে বলে জানায় দেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠনটি। বাড়তি ব্যয়ের চাপ না থাকলে খুব দ্রুত এই অবদান ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে জানানো হয়।
বর্তমান বাস্তবতায় মোবাইল ফোনের কর এবং অপারেটরদের ওপর চাপ কমলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যোগাযোগের আওতায় আসতো। তবে এজন্য কর প্রণয়ন করা কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করেন মোবাইল অপারেটর প্রতিনিধিরা। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে টেলিকম শিল্পের ওপর বর্তমানে বাজেটে আরোপিত কর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা।