নিজে গোল করেছেন, সঙ্গে সার্জিও রবের্তোকে দিয়ে গোল করিয়ে ম্যাচের নায়ক বনে গেছেন বার্সার যুব একাডেমি লা মাসিয়ার প্রাক্তন ছাত্র জেরার্ড দেলেফেউ। ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল বেটিসকে ২-০ গোলে হারিয়ে সুপার কাপের ব্যর্থতা ভুলে জয় দিয়ে লা লিগার নতুন মৌসুম শুরু করেছে বার্সেলোনা।
সন্ত্রাসী হামলার শোকে জর্জরিত বার্সেলোনা। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে জার্সিতে নিজেদের নামের জায়গায় ‘বার্সেলোনা’ নাম ধারণ করে মাঠে নেমেছিলেন মেসিরা। নিহতদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতার পর শুরু করা হয় ম্যাচ। জয় দিয়েই যার শেষ টেনেছে কাতালানরা।
ম্যাচের আগে ঘুরেফিরে একটা প্রশ্ন ছিল- সুয়ারেজ চোটে, নেইমার পিএসজিতে, নেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাও; একা জ্বলে উঠতে পারবেন তো মেসি? ক্ষুদে জাদুকর পেরেছেন! গোল পাননি, কিন্তু নেইমারের শূন্যস্থানে আরেকজনকে জ্বলে উঠতে সাহায্য করেছেন দুর্দান্তভাবে। রোববার অধিনায়কের সাহচর্যে নিজের জাত চিনিয়েছেন জেরার্ড দেলেফেউ। মেসিও অবশ্য গোল পেতে পারতেন, তিন তিনবার পোস্ট দুর্ভাগ্যে তার প্রচেষ্টা আটকে যাওয়ায় সেটা হয়নি।
বেটিসের বিপক্ষে ‘পিএমদি’কে দিয়ে আক্রমণভাগ সাজিয়েছেন কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে। মেসিকে সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং পজিশনে রেখে দুই উইংয়ে আক্রমণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন পাকো আলকাসের এবং দেলেফেউয়ের কাঁধে। আলকাসের ব্যর্থ হলেও নিজের কাজে দারুণভাবে সফল হয়েছেন দেলেফেউ।
২০০৯ সালের পর আবারও সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং পজিশনে খেললেন মেসি। আট বছর আগে এল ক্লাসিকোতে মেসিকে এই পজিশনে খেলিয়েই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৬-২ গোলের উড়ন্ত জয় তুলে নিয়েছিলেন তৎকালীন কোচ পেপ গার্দিওলা।
পুরনো পজিশনে ভাগ্যকে পাশে পাননি মেসি। বারবার তাকে গোল বঞ্চিত করেছে বেটিসের গোলবার। কিন্তু বার্সাকে বঞ্চিত করতে পারেনি। প্রথমে ম্যাচের ১৪ মিনিটে মেসির একটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিক ক্রসবার ছুঁয়ে বাইরে চলে গেছে।
পরে ম্যাচের ২৫ মিনিটে আবারও গোল পাওয়া হয়নি ক্ষুদে জাদুকরের। দেলেফেউ ও আলকাসেরের সঙ্গে এক-দুই করে বেটিসের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মেসি, তখন তার বাঁ-পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত শট ক্রসবার ঘেঁষে চলে যায়।
সেই ক্রসবারের কাছেই ম্যাচের ৩৫ মিনিটে আবারও আটকে গেছেন মেসি। বার্সা অধিনায়কের আরেকটি ফ্রি-কিক ফিরে এসেছে পোস্টে বাধা পেয়ে।
কিন্তু ৩৬ মিনিটে আর ভাগ্যবঞ্চিত হয়নি বার্সা। এসময় গোল আসে মেসিকে ঘিরেই। কাতালানদের তখন গোলের আনন্দে ভাসিয়েছেন দেলেফেউ। মেসির সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ার ফসল আসে। মেসি ডানপ্রান্তে দেলেফেউয়ে দিকে বল ঠেলে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। দূরহকোণ থেকে সেটি ক্রস করেছিলেন স্প্যানিশ উইঙ্গার। যা অতিথিদের ডিফেন্ডার অ্যালিন তোসকার পায়ে লেগে খানিকটা বাঁক বদলে বেটিসের জালে জড়িয়ে যায়।
প্রথম গোলের মিনিট তিনেক পর আবারও বেটিসের জালে বল জড়িয়েছে বার্সা। এবারের নায়কও দেলেফেউ। তবে নিজে নন, রবের্তোকে দিয়ে গোল করিয়েছেন তিনি। বেটিসের এক ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা রবের্তোকে বল বাড়ান দেলেফেউ। সহজ সেই লোপ্পা সুযোগ কাজে লাগিয়ে শোকগ্রস্ত কাতালানদের আরেকবার আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন রবের্তো।
এদিন ভাগ্যকে একদমই পাশে পাননি মেসি। দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার বাম পায়ের আরেকটি জোরাল শট পোস্টে লাগে। ৭১ মিনিটে তার আরেকটি ফ্রি-কিক একটুর জন্য ক্রসবার উঁচিয়ে যায়।
পরে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন দেলেফেউয়ের বদলি নামা অ্যালেক্সিস ভিদাল। ৭৪ মিনিটে মেসির ডিফেন্স চেরা পাসে ফাঁকা পেয়েও বেটিস গোলরক্ষকের গায়ে বল মেরেছেন ভিদাল।
মেসির বারে বল লাগিয়ে গোল করতে ব্যর্থ হওয়ার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন ৮০ মিনিটে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার চোখ ধাঁধানো আরেকটি শট লৌহদণ্ডে লেগে ফিরে এসেছে। এর এক মিনিট পর দুর্লভ হেডেও বল পাঠিয়েছেন বার ঘেঁষে বাইরে। ৮৪ মিনিটে তার আরেকটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন বেটিস গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৮৭ মিনিটে নিজেদের একমাত্র সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি বেটিসও। ফাঁকায় দাঁড়িয়েও বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেনের মাথার ওপর দিয়ে বাইরে বল পাঠিয়েছেন অতিথিদের মিডফিল্ডার ফাবিয়ান রেসেস।
ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে আবারও গোলবঞ্চিত হয়েছেন বার্সা অধিনায়ক। অবশ্য তাতে ক্ষতির কিছু হয়নি। গোল না পেলেও যেকোনো সময় যেকোনো ভাবে বিস্ফোরিত হতে পারেন সেই নমুনাই দিয়ে রাখলেন মেসি।