চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মূর্তিকারিগরে প্রতিমূর্ত এক শহর

প্রতিটা ইটই প্রাণ পেতে চায়। কিছু একটা হতে চায়। প্রতিটি ভবনের আত্মা আছে, আছে মন। যে ভবনের আত্মা নেই সেটির প্রেতাত্মাও আছে হয়ত। ওই রকম ভবনে থাকলে গা ছমছম করতেই পারে।

‘ইট কিছু হতে চায়, ভবনের আত্মা আছে’– এসব কথা বলেছিলেন মার্কিন স্থাপত্যশিল্পী লু্ই আই কান। আমাদের জাতীয় সংসদের স্থপতি তিনি। আগেও হয়ত ইট ও ভবনকে প্রাণময় হিসেবে দেখেছেন স্থাপত্যশিল্পীরা, কিন্তু তার মতো এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে সুস্পষ্ট উচ্চারণে কেউ বলেননি কথাগুলো। লুই আই কানকে এই কারণে আমার খুব ভালো লাগে।

ইট ও ভবনের আত্মা থাকলে হাজারো ভবন আর লাখো মানুষ নিয়ে যে শহর সে তো নিষ্প্রাণ হতেই পারে না। শহর নিজস্ব আত্মাহীন হলে, নিষ্প্রাণ হলে আমরা সহজেই টের পাই। তখন সে শহরকে বলি– না, শহরটার কোনো প্রাণ নেই। বলি– ভূতের শহর, প্রেতাত্মার শহর।

ময়মনসিংহ শহর তেমন এক প্রাণময়-মনময় শহর। ‘প্রতিটি শহরের যেমন নিজস্বতা আছে’ তেমনই আছে ময়মনসিংহ শহরেরও। সেই শহরের জীবনী লেখার চেষ্টা করেছেন জাহিদ নেওয়াজ খান। পুরো জীবনী নয়। জীবনের একাংশ মাত্র।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর কেমন ছিল বাংলাদেশের (পূর্ব পাকিস্তানের) জেলা শহরগুলো। প্রগতিশীলতা, নাগরিকবোধ, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় কীভাবে নতুন রূপ পাচ্ছিল প্রতিটি শহর। কারা গড়ে তুলছিল সেই সব শহরের আধুনিক মেজাজ ও মনন। প্রতিটি শহরের জীবনী থাকলে তা বোঝা যেত অনায়াসে।

জাহিদ নেওয়াজ খানের লেখা ‘মূর্তিকারিগর’ পড়লে যেমন বোঝা যায় ময়মনসিংহ শহরকে। দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত সময়ের ময়মনসিংহের জীবন রচনা করেছেন তিনি। বইটি কোনো ইতিহাসের বই নয়, ঐতিহাসিক কোনো উপন্যাসও নয়। ময়মনসিংহ নামের একটি শহরের শহর হয়ে উঠার, সেই শহরের মানুষের নাগরিক হয়ে উঠার ৮৭ পৃষ্ঠার এক উজ্জ্বল দলিল। জাহিদ নেওয়াজ খান যতটা গভীর অভিনিবেশে দেখেছেন তার বেড়ে উঠার শহরকে ততটা অভিনিবেশ নিয়ে সচরাচর এভাবে দেখে না কেউ।

ময়মনসিংহ শহর নিয়ে যাদের কোনো ভাবালুতা নেই তারা ‘মূর্তিকারিগর’ পড়তে পারেন ফিকশন হিসেবে। আমার কাছে অবশ্য তা ফিকশন নয়। যে শহরের আমিও একজন সেটা তো আমার কাছে ফিকশন হতে পারে না। আমার জীবন যেমন আমার কাছে ফিকশন নয়, তেমনই নয় ‘মূর্তিকারিগর’ও।

এক নজরে মূর্তিকারিগর:
রশিদ নামে এক প্রতিমাশিল্পীকে একাত্তরের এপ্রিল মাসে ময়মনসিংহ শহরে হত্যা করা হয়। তাকে ডাকা হয় ‘একাত্তরের যীশু’ নামে ।তবে লেখক জাহিদ নেওয়াজ খানের প্রথম উপন্যাস ‘মূর্তিকারিগর’-এর গল্পটি একেবারেই রশিদের জীবনভিত্তিক নয়। উপন্যাসটি প্রথমে ভোরের কাগজের ঈদ সংখ্যায় প্রকাশ হয়। বই হিসেবে যা প্রকাশ করেছে ‘আবিষ্কার’ প্রকাশনী। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ।

যেখানে পাওয়া যাচ্ছে ‘মূর্তিকারিগর
রকমারি.কম ছাড়াও ‘মূর্তিকারিগর’ পাওয়া যাচ্ছে
ঢাকা: পাঠক সমাবেশ, শাহবাগ এবং আবিষ্কার, কনকর্ড টাওয়ার, কাঁটাবন
চট্টগ্রাম: বাতিঘর
সিলেট: বইপার্ক.কম এবং বই বিচিত্রা
রাজশাহী: বিদ্যাসাগর
বগুড়া: বই বিচিত্রা
ময়মনসিংহ: আজাদ অঙ্গন