মুমিনুল হকের ক্রিকেট জীবন শুরু বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিকেএসপি থেকে। তখন বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। যিনি গড়ে তুলেছেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। এখনও ব্যাটিং নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়লে সবার আগে ছোটবেলার গুরুর কাছে ছুটে যান মুমিনুল। প্রিয় এই শিষ্যের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বিকেএসপির এই সাবেক কোচ। তিনি বরং কোচ হাথুরুসিংহের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
একসময় জাতীয় দলের সহকারী কোচের ভূমিকায় থাকা সালাউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘যদি বলা হয় তার টেকনিকে সমস্যা… তাহলে এত টাকা দিয়ে কোচকে কী করতে আনা হয়েছে। তার কাজই তো ছোটখাট সমস্যা ঠিক করে দেওয়া। যদি এত বড় কোচ হন… এত নাম-ডাক তাহলে এই জিনিসটা ঠিক করে দিতে পারছেন না কেন?’
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে হেড কোচ নাকি প্রায়ই বলেন, ‘মুমিনুলের উচ্চতা কম হওয়ায় বাউন্সার ঠিকভাবে সামলাতে পারে না। এখন নাকি তিনি যুক্তি দেন অফস্পিন খেলতে সমস্যা। প্রশ্ন হল, যে ব্যাটসম্যানের স্কিলে সমস্যা তিনি কী করে নিউজিল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে পর পর দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। টেস্টে মুমিনুলের এখনকার গড় ৪৬.৮৮। যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২২ টেস্টে ১১ ফিফটি আর চারটি সেঞ্চুরি। বিদেশের মাটিতে শেষ দুটি টেস্টে অতটা ভাল করতে না পারায় তার উপর এমন অবিচার। অথচ দেশের মাটিতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। দেশে মুমিনুলের গড় ৫৮। ধারে কাছে নেই অন্য কোনও বাংলাদেশি।
কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকছেন না টেস্ট দলে। শেষ পর্যন্ত সে শঙ্কাই সত্যি হয়েছে। কোচের ইচ্ছাতেই যে মুমিনুল হক টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন তা স্পষ্ট হয়েছে দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনেই।
মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেছেন, মাহমুদউল্লাহ থাকবে না এটা প্রত্যাশিত। শেষ যে স্কোয়াড নিয়ে আমরা শ্রীলঙ্কায় খেলেছিলাম সেখানে কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ছিল না।’
কিন্তু মুমিনুলের বাদ পড়া নিয়ে যৌক্তিক কিছু বলতে পারেননি মিনহাজুল। যে জন্য সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে তাকে। পরে অসহায় হয়েই বলেছেন, ‘কিছু খেলোয়াড়ের পজিশন কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে। এটা সিলেকশন থেকে করা যায় না। তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে, হেড কোচের একটা চাওয়া থাকে। সেই অনুযায়ী কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয়।’
এ কথাতেই স্পষ্ট হেড কোচ না চাওয়াতেই দলে নেই মুমিনুল। মিনহাজুল অবশ্য শুরুতে একটি খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। সেটি হল, শেষ ৬ ইনিংসে মুমিনুলের মাত্র একটি ফিফটি। এমন যুক্তির পেছনে ঘোর আপত্তি সালাউদ্দিনের, ‘পৃথিবীতে এমন কোনও ক্রিকেটার নেই যে পাঁচটা-ছয়টা ম্যাচে রান কম করেনি। সবাই প্রতিদিন একশ মারবে তা তো হয় না। একজন ব্যাটসম্যান কয়েকটা ইনিংসে খারাপ করতে পারে। যে সবসময় রান করে এসেছে, সে দুইটা-তিনটা টেস্টে ওই রকম রান নাও করতে পারে। আমি মনে করি এটা খুবই বাজে একটা সিদ্ধান্ত।’
ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই আর বিবেচিত হন না মুমিনুল। টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা নিয়েই চলতে হয় তাকে। এবার সেটিও কেড়ে নেওয়ার পর্যায়ে।
অন্য ফরম্যাট না খেলে কেবল টেস্ট খেলা কতটা চাপের মুমিনুলের জন্য সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন সালাউদ্দিন, ‘ওর (মুমিনুল) জন্য আরও কঠিন। কারণ ও টেস্ট খেলতে নামে এক বছর, ১৫ মাস, ১৮ মাস পর পর। এসেই যে পারফর্ম করবে এটাও আশা করা ঠিক না। অন্যরা যারা ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে, তাদের জন্য অনেক সুবিধা। কারণ তারা সারা বছর ইন্টারন্যাশনাল ফ্লেভার পায়। কিন্তু মুমিনুলের জন্য কঠিন।’
মুমিনুল বাদ পড়ায় মন্দের ভালোও দেখছেন ক্রিকেটার গড়ার কারিগর সালাউদ্দিন, ‘যদি সে সুযোগও পেত তাহলে চাপের মধ্যে থাকত। আমার কাছে মনে হয় ভালোই হয়েছে। এভাবে পারফর্ম করা কঠিন। সে যখন আবার রান করে ফিরবে। দল যখন তাকে চাইবে তখন ঢুকলে বেটার হবে। আসলে কোচ-ম্যানেজমেন্ট যদি না চায় তার জন্য পারফর্ম করা খুব কঠিন।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়া প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘মাহমুদউল্লাহ যখন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছে তখনই তাকে সরিয়ে দেয়া হল। সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রমাণ করে যাচ্ছিল যে ওয়ানডেতে সে কতটা কার্যকরী। তার যে ফর্ম…যদিও তার শেষ টেস্ট ইনিংসগুলো অত ভাল ছিল না, তবে ভালো ফর্মে আসতে শুরু করেছিল। বর্তমানে খুবই ভাল করছিল, এই সময়টা কাজে লাগালে আমাদের জন্য খুবই ভাল হতো।’