রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ছাড়া ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০১৭’ উপলক্ষে কোন কর্মসূচি হাতে নেয়নি সাংবাদিকতা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশের অন্য কোন পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
‘ক্রান্তিকালে সমালোচকের দৃষ্টি: শান্তিপূর্ণ, ন্যায়নিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ গ্রহণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন কিছু কর্মসূচি হাতে নিলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দিবসটি নিয়ে ভবিষ্যৎ সাংবাদিক গড়ার প্রতিষ্ঠান– পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগগুলোতে কোন আগ্রহ দেখা যায়নি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. নজরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সকালে শোভাযাত্রা এবং দুপুরে দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে আমরা দিবসটি পালন করি।
সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে এমন ৮টি পাবলিক ও ৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ কোন কর্মসূচির আয়োজন করেনি।
চ্যানেল আই অনলাইন বিষয়টি নিয়ে কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), স্টেট ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, দিবসটি উপলক্ষে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কর্মসূচি ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. মফিজুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দিবসটি নিয়ে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিভাগের পক্ষ থেকে এ বছর কোন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি।
দিবসটি নিয়ে সাংবাদিকতা বিভাগগুলোর এ ধরনের উদাসীনতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা। তারা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, এদিন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে দিবসটি পালন হলে গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তাদের ধারণা স্পষ্ট হতে সহায়তা করতো। যার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হতো তাদের ক্লাসরুমের শিক্ষা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নেহাল বলেন: সাংবাদিকতা বিভাগ বলতে আমি বুঝি ওই বিভাগের একটা ছেলেকে আপাদমস্তক সাংবাদিকতার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দুটো দিক থেকেই। মুক্ত গণমাধ্যম ব্যাপারটা এখনও কেমন স্বপ্নের মত মনে হয়।সাংবাদিকতার প্রায়োগিক দিক থেকে আমরা কতটা স্বাধীন, নিরপেক্ষ আছি, সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে আমাদের অন্তত কিছু কর্মসূচি দিয়ে হলেও এই বিষয়টার সাথে একটা তাত্ত্বিক যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার দরকার ছিল।
‘কিন্তু হয়নি। আমরা অনেকে হয়তো জানিও না দিবসটির কথা। এটা দুর্ভাগ্যজনক ও হতাশার একটা বিষয়।’
দিবসটি পালন উপলক্ষে কোন ধরনের কর্মসূচি হাতে না নিলেও শিক্ষার্থীদের এমন দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: এ ধরনের কর্মসূচি আসলে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পালন করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের ধারণা আরও স্পষ্ট হয়। কারণটি দিবসটি সম্পুর্ণ গণমাধ্যমকেন্দ্রিক এবং আমাদের পাঠদানের বিষয়ও তাই। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের বিভাগগুলোর এক ধরণের উদাসীনতা রয়েছে।
এ বছর পালন না হলেও আগামী বছর থেকে দিবসটি বিশেষভাবে পালনের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান অধ্যাপক পাণ্ডে।
১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুযায়ী জাতিসংঘ ১৯৯৩ সাল থেকে এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।