অতীতেও রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেনি মিয়ানমার। তাই বাংলাদেশ সফরে এসে অং সান সু চি’র দপ্তর মন্ত্রী টিন্ট সোয়ের আশ্বাসে পুরোপুরি আস্থা রাখা যায় না।
তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের মন্ত্রীর এই সফর ইতিবাচকভাবে দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মতি জানিয়েছে দেশটি। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল হক।
বহুদিন ধরে চলে আসা রোহিঙ্গা সংকটে দেশটির অবস্থান ইতিবাচক ছিলো না জানিয়ে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে অতীতের প্রতিশ্রুতিগুলো মিয়ানমার আদৌ কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এখন তারা বলছে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত ফিরিয়ে নেবে। মিয়ানমারের এমন আশ্বাসে পুরোপুরি আস্থা রাখা যায় না।”
রোহিঙ্গা নিধন এবং নিজ দেশের লাখো মানুষকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা মিয়ানমার এতো দিন এ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদের মতে, দেশটি এখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে মন্ত্রী পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে মিয়ানমারকে পশ্চিমা দেশগুলো কড়া কথা শুনিয়েছে।
কিন্তু চীন এবং বাংলাদেশের ‘বন্ধুপ্রতীম’ রাশিয়ার মিয়ানমারমুখী মনোভাব গুরুত্ব না দিলে সবই কথার কথা থেকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই অধ্যাপক।
এজন্য বাংলাদেশের নতুনভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর সময় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘চীন, ভারত এবং রাশিয়া যদি মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যায় তাহলে দেশটি বেপরোয়া আচরণ চালিয়ে যাবে। আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করবে। তাই এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের গতানুগতিক পররাষ্ট্রনীতি যখন কাজে আসছে না তখন নতুন কিছু ভাবার সময় এসেছে।’
তবে লাখ-লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশকে নিজ স্বার্থেই কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
অধ্যাপক এহসানুল বলেন,‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেকোনো সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আলোচনার বিকল্প নেই।’
আজ সোমবার বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মতির কথা জানায় মিয়ানমার। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি তত্ত্বাবধান করবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এসব কথা জানান। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান খুব শিগগির মিয়ানমার সফরে যাবেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী,২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অষ্টম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। সেসময় দুই মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবিরে থাকা তালিকাভুক্ত দুই হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার। তবে এখনও তাদের ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি।
১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়। এরপর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউএনএইচসিআর পরিচালিত কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা আগে থেকেই রয়েছে।