মিশরের উত্তর সিনাই প্রদেশের বির আল-আবেদ শহরের আল-রউদা মসজিদে হওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ‘সর্বোচ্চ শক্তিতে’ জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি।
ওই সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৫ জনে পৌঁছেছে। উত্তর সিনাই প্রদেশের এই মসজিদে জুমার নামাজের সময় করা ওই হামলায় আহত হন শতাধিক মুসল্লি।
হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এ নিয়ে আলোচনা শেষে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, ‘যা হচ্ছে তা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা থেকে আমাদের ঠেকানোর একটি চেষ্টা। পুলিশসহ পুরো সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হামলায় শহীদদের নামে প্রতিশোধ নেবে এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা পুনর্প্রতিষ্ঠা করবে।’
শুক্রবারের হামলার জবাবে এরই মধ্যে গোলাবারুদ মজুদ করে রাখা ছিল এমন বেশকিছু ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ মিশরের বিমান বাহিনীর কয়েকটি জেটের সাহায্যে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র। এছাড়াও মসজিদে হামলায় ব্যবহৃত কয়েকটি গাড়ি চিহ্নিত করে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
হামলার ঘটনায় মিশর জুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ অন্যান্য বিশ্বনেতারা এই মর্মান্তিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শোক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এই ঘটনায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে মিশরের সরকার।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে: জুমার নামাজ চলার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর রাস্তা থেকে চারটি গাড়িতে করে বন্দুকধারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালাতে থাকা মুসল্লিদের উপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে।
২০১৩ সালের পর থেকে দেশটিতে ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হামলা বেড়েছে। মসজিদের ভেতরের ছবি থেকে হামলায় নিহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সমর্থক ছিলেন এই হামলার লক্ষ্য। তিনি ওই সময় সেখানে নামাজ পড়ছিলেন।
শুক্রবার জুমার নামাজে এই হামলা কারা চালিয়েছে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি বলে মিশরের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এক্সট্রা নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। এখনো কোনো দল বা পক্ষ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
সেনা হস্তক্ষেপে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির পতন হলে এই ঘটনার জেরে ২০১৩ সালের পর প্রদেশটিতে রক্তক্ষয়ী হামলা বেড়ে যায়, এসব হামলায় সন্ত্রাসীদের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
চলতি বছরের জুলাইয়ে সিনাইয়ের দু’টি সেনা চেকপোস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৩ সেনা সদস্য প্রাণ হারান। কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষ থেকে ওই হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছিল। এছাড়া মে মাসে দক্ষিণ মিশরে এক সন্ত্রাসীর গুলিতে ২৯ জন মিশরীয় খ্রিস্টান নিহত হয়।
তবে নিহতের সংখ্যায় এবারের হামলাটি দেশটির ইতিহাসের ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলা। এর আগে ২০১৫ সালে উত্তর সিনাই প্রদেশে একটি মেট্রোজেট প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ২২৪ জন নিহত হয়েছিল।