পেন্ডুলামের কাটার মতো দোলেনি ম্যাচের ভাগ্য। তবুও থাকল রোমাঞ্চ। হঠাৎ সেই রোমাঞ্চ জাগালেন রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। সিলেট সিক্সার্সের দরকার তখন ৪ ওভারে ৩৫ রান, হাতে ৭ উইকেট। শতরানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন সাব্বির-নাসির। মাশরাফীর ওই ওভারটিতে নিতে পারলেন মাত্র ২ রান। তাতে দারুণভাবে বাঁক নিল ম্যাচ। বল হাতে পেরেরা-রুবেলরাও জাগলেন। রান আটকে হারতে বসা ম্যাচ ৭ রানে জিতে নিল রংপুর।
শেষ ওভারে সিলেটের দরকার ছিল ১৯। নাসির থাকার পরও এলো মাত্র ১১ রান।
হাতে ৬ উইকেট রেখেও সিলেট টপকাতে পারেনি ১৭০ রানের টার্গেট। রংপুরের শেষের জাদুকরী বোলিংয়ে তাদের থামতে হয় ১৬২ রানে। টানা তিন হারের পর জয় দেখল রংপুর।
শুধু বোলিংয়ে ওই ওভারটিই নয়। ফিল্ডিংয়েও জাদু দেখিয়েছেন মাশরাফী। সীমানায় দাঁড়িয়ে ছক্কা ঠেকিয়েছেন একটি। ১৮তম ওভারে বাজপাখির মত উড়ে পয়েন্ট থেকে ফিরিয়েছেন নিশ্চিত চার। টিম ব্রেসনান উইকেটে এসেই কাট করেন। ডানদিকে উড়ে মাশরাফী ঠেকান সেটি। বাঁচিয়ে দেন ৩ রান।
শুরুর কাজটা করে দিয়েছিলেন সোহাগ গাজী, মাশরাফী, রুবেল হোসেন মিলে। ২৫ রানের মধ্যে বাবর আজম (২), ধানুস্কা গুনাথিলাকা (৮), আন্দ্রে ফ্লেচার (১২) ফিরে যান। ওভারও পেরিয়ে যায় চারটা। পরে মাশরাফীর ম্যাজিক ওভারের আগ পর্যন্ত কেবলই সাব্বির-নাসিরের দুর্দান্ত ব্যাটিং উপভোগ করেছেন দর্শকরা।
তাদের জুটিতে ১০০ রান চলে আসে ৬৬ বলে। শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানের জুটিটি ভাঙেন পেরেরা, সাব্বিরকে লং অনে ক্যাচ বানিয়ে। ৪৯ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ৭০ রানের ইনিংসটি। ৩২ বলে ফিফটি লং-অফের উপর দিয়ে পেরেরাকে ছক্কা হাঁকিয়ে। নাসির ৪ চার ও ২ ছক্কায় পূর্ণ করেন বিপিএলের পঞ্চম আসরের প্রথম ফিফটি। সিলেটের অধিনায়ক অপরাজিত থেকে যান ৫০ রানে।
অফস্পিনারের সামনে গেইলের দুর্বলতা জানা সবার। বাংলাদেশে খেলতে এলে শুরুর ওভারেই পড়েন অফস্পিনারের সামনে। নাকাল হতে দেখা গেছে এবারের বিপিএলেও। নাসির প্রথম ওভারে দিলেন এক রান। প্রথম বলে ম্যাককালাম সিঙ্গেল নিয়ে চলে যান ননস্ট্রাইকে। ৫ বল খেলে রান বের করতে পারেননি গেইল। পরের ওভারে শুভাগতকে দুই ছক্কা হাঁকান ম্যাককালাম।
নাসিরকে ১২ বল ডট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে গেইল ভাঙেন ডটের বৃত্ত। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ম্যাককালামকে সাজঘরে পাঠান নাসির। ৮০ রানের জুটিতে তখন বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা দলটির সামনে।
শুরুতে উইকেটে অস্বস্তিতে ভোগা গেইল খোলস ছেড়ে বের হতেই ফিরে যান আবুল হাসান রাজুর বলে বোল্ড হয়ে। ততক্ষণে অবশ্য ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটিংদানব। ৫০ রান করেন ৩৯ বলে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায়।
ভাল শুরু ধরে রাখতে পারেনি রংপুর। ছোট ছোট ইনিংস খেলে বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন (২৫), থিসারা পেরেরা (১৫), শাহরিয়ার নাফীস (৮)। শেষদিকে রবি বোপারা ঝড় না তুললে দেড়শ’র বৃত্তে আটকে যেতে পারত রংপুর। ১২ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৮ রান তুলে লড়াকু পুঁজিতে নিয়ে যান তিনি।
সিলেটের সফল বোলার আবুল হাসান রাজু। গেইল ও নাফীসের উইকেট নিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। রান দিয়েছেন ৪ ওভারে ২৪। মিডল ওভারে দারুণ স্লোয়ার দিয়ে রান আটকে রাখেন টিম ব্রেসনান। এই ইংলিশ বোলার ছিলেন সবচেয়ে কিপটে। ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়েছেন, উইকেটও নিয়েছেন একটি। নাসির দেন ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ ২৭ রান। বিনিময়ে পান ম্যাককালামের উইকেট। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। ৪ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন এই ইংলিশ পেসার।