জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের ৫৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের দায়ের করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে উপাচার্যের বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। এসময় উপাচার্য কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় তাঁর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন।
এরপর চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন এক লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- ৪ জুলাইয়ের আগে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহার, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সকল শিক্ষক-শিক্ষর্থীকে আস্থায় এনে সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে পূর্বের সকল দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কথা রাখেনি। এর আগে উপাচার্যের আমরা সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সিন্ডিকেট সভায় মামলার বিষয়ে আশানুরূপ কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভীতি সঞ্চার করার জন্য ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করেছে। মামলার আসামি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে, উৎকোচ গ্রহণ করছে। আগামী ৪ জুলাই মামলার শুনানি রয়েছে। এর মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
এসময় আগামী ৪ জুলাই মামলার নির্ধারিত হাজিরার তারিখের আগে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবি জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো আদায় না হলে আগামী ৪ জুলাইয়ের পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক মো. শামছুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান সুমন, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন, সহকারী অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৬ জুন ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নাজুমল হাসান রানা ও মেহেদী হাসান আরাফাত নামের দুই জাবি শিক্ষার্থী নিহত হন। ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে পরদিন ২৭ মে সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিলে তারা উপাাচার্যের বাসভবনের ফটকের তালা ভেঙ্গে প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। এসময় উত্তেজিত কিছু শিক্ষার্থী ভাঙচুর চালায়। পরে ওইদিন রাতেই ৩১ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।