মানবাধিকার নিশ্চিতের বৈশ্বিক দাবিকে বাস্তবায়ন করতে আগে ঘরে-বাইরে নারী ও কন্যা শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন, নারীকে মানুষ ভাবতে শেখানো সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারলে রূপা-তনুদের প্রতি বর্বরতা শেষ হবে না।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বানে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন এনজিও কর্মী ও তরুণ সমাজকর্মীরা।
বেসরকারি সংস্থা রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ সার্ভিসেস ট্রেনিং এন্ড এডুকেশন প্রোগ্রাম (আরএইচস্টেপ) এবং রাইট হেয়ার রাইট নাও (আরএইচআরএন) বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে নারীর প্রতি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে ২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর ১৬ দিনের একটি প্রচারাভিযান চালায়। এই প্রচারাভিযানের মূলকথা হচ্ছে ‘কেউই রবে না পিছে: নারী ও মেয়েশিশুর নির্যাতনমুক্ত জীবন চাই’।
প্রচারাভিযানের শেষ দিন রাজধানীর মিরপুরের একটি সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন এনজিওকর্মী ও কিশোর-তরুণরা।
নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনে পুরুষকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরএইচস্টেপ নির্বাহী পরিচালক কাজী সুরাইয়া সুলতানা বলেন:’নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আমাদের সকলের সোচ্চার হতে হবে। এজন্য নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখার সংস্কৃতির অনুশীলন শুরু করতে হবে পরিবারে। শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র নারীর প্রতি মানসিকতা পরিবর্তনের পথচলায় পুরুষদের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এই সম্পৃক্ততা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কার্যকর ভুমিকা রাখবে।’|
দিবস কেন্দ্রিক সভা-সেমিনার করে নারীর মানবাধিকার কতটুকু অক্ষুণ্ণ থাকছে তা নিয়ে সন্দিহান নারীপক্ষের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ইউবিআর) কামরুন নাহার।
তবে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে মানুষ ভাবতে সমাজ তৈরির প্রচেষ্টা চালু রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন:’নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এই প্রচারাভিযান প্রতিবছর পালিত হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হচ্ছেনা। প্রতিদিন আমাদের একজন না একজন রূপা, তনু’র খবর পড়তে হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আজকে আমরা একত্রিত হয়েছি।যতদিন নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধ না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই কার্যক্রম আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে একটি নাটিকায় তুলে ধরা হয় জেন্ডার বৈষম্য , কৈশোরে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার এবং জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার চিত্র ।
আলোর ধারা ইয়ুথ ফোরামের কিশোর কিশোরীদের এই নাটিকায় কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন মানসিক সংশয়, কাছের মানুষের অনাঙ্ক্ষিত স্পর্শ এবং পদে পদে আক্রান্ত হওয়ার বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা হয়।
সেরাক বাংলাদেশের ডিপুটি ডিরেক্টর জিসান মাহমুদ বলেন:’জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে ১৬ দিনের প্রচারাভিযানের আজকে শেষ দিন। আমি একজন ইয়ুথ এক্টিভিস্ট হিসেবে চাই নারী ও শিশুর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার হোক। বিচারহীনতা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে। মানবাধিকার নিশ্চিতে তরুণরা যেন আরও ভালোভাবে ভুমিকা রাখতে পারে সেজন্য তরুণদের মধ্যে মানবিক বোধ জাগিয়ে তোলা দরকার।’
আরএইচআরএন এর বাংলাদেশের জাতীয় কর্মসূচির সমন্বয়ক সায়েদা বিলকিস বানী বলেন: `তরুণদেরকে ক্ষমতায়িত করার মাধ্যমে সমাজ থেকে নারী ও শিশুদের প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. কল্লোল চৌধুরী, বাপসা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জোবায়ের প্রমুখ।