চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মনোনয়ন পেতে ভিন্ন কৌশলে ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহেও প্রধান সংবাদ। প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজের স্ত্রীকে নিয়ে যে নোংরামির সূত্রপাত তিনি করেছিলেন সেটা যে তার ভুলে হয়েছে স্বীকার করেছেন। তিনি এ যাবতকাল কোনো ভুল স্বীকার করেননি। গত সপ্তাহ সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে তার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রচারণার জন্য।

এর আগে এত অসহায় তাকে দেখা যায়নি। তিনি কখনো ভুল স্বীকার করেন না, ক্ষমা চান না, খুবই কঠোর ধরনের। এই সব ইমেজই তার সমর্থকরা পছন্দ করে থাকে। ফলে তিনি কখনোই তার ইমেজ রক্ষার্থে যা বলেছেন বা করেছেন তা ফিরিয়ে নেন না। গত সপ্তাহ ছিল তার জন্য সেই অর্থে খারাপ। অবশেষে টেডের স্ত্রীকে নিয়ে নোংরামি ফিরিয়ে নিতে হয়েছে। যা তার সমর্থকরা আবার পছন্দ করবে না। ফলে এখন তার সময় এসেছে কেবল হারাবার।

ওই দিকে রিপাবলিকান দল আরও বেশি সংগঠিত ডোনাল্ডকে প্রতিরোধ করবার জন্য। গত সোমবার জেব বুশ সমর্থন দিয়েছেন টেড ক্রুজকে।

কিন্তু তার জন্য অস্বাভাবিকতা শুরু হয়েছে গত সপ্তাহের শুরুতেই। সি.এন.এন. এন্ডারসন কুপারের সঙ্গে টাউন হল মিটিঙের সময়। প্রথমটা ছিল এন্ডারসন কুপার যখন জিজ্ঞেস করেছেন টেড ক্রুজের স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি দ্রুত উত্তর করেছেন, ‘এটা টেড শুরু করেছে’। তিনি যখন বলেছেন ‘এটা টেড শুরু করেছে’, এন্ডারসন তখন সুযোগটা নিয়েছেন এ কথা বলে যে তুমি যে উত্তর করছ ‘এটা ও শুরু করেছে’ এ ধরনের কথা পাঁচ বছরের শিশুরা বলে থাকে। তিনি আবারো একই রকম উত্তর করেছেন যে টেড শুরু করছে। এন্ডারসন আবারও বললেন, তুমি পাঁচ বছরের শিশুর মতন উত্তর করছ, প্রকৃত উত্তর দাও। ডোনাল্ড আবারও এক উত্তর দিলে, এন্ডারসন একইভাবে বলেন। এই পর্বটি ছিল ডোনাল্ডের জন্য আগাগোড়া অস্বস্তিকর এবং পরাজয়ের।

এর আগে উইসকন্সিনের রক্ষণশীল রেডিও টক শো হোস্ট চার্লস সাইক্স একইভাবে ডোনাল্ডের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় তাকে বারো বছরের কিশোর বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরও আগে, প্রায় মাস দু’য়েক হবে, এক তর্কের সময় মঞ্চে ডোনাল্ড যখন টেড ক্রুজের কথা বলা থামিয়ে দিয়েছিলেন, টেড তখন ডোনাল্ডকে নির্বোধ শিশুর ক্ষেত্রে যেমন শিক্ষক বলে থাকেন তেমন করেই বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড শেখো কী করে অন্যকে ডিস্টার্ব না করতে হয়, লম্বা করে শ্বাস নাও, এক থেকে দশ মনে মনে গুনতে থাকো।’ উল্লেখ্য, ক্লাসকক্ষে দুষ্ট বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকরা এমন নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ফলে ডোনাল্ডের বুদ্ধিমত্তা যে শিশু পর্যায়ের সেটা প্রায় সবাই তাকে মনে করাবার চেষ্টা করে থাকে।

গত সপ্তাহের অন্য সমস্যাও তার জন্য শুরু হয় এন্ডারসন মিটিং থেকে। আগে যখন রিপাবলিকান দল ডোনাল্ড বিরোধী অবস্থান আরও পরিষ্কার করে সেই প্রেক্ষিতেই এ্যান্ডারসন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যদি মনোনয়ন না পাও তবে তুমি কি দলের প্রতি অনুগত থাকবে? ডোনাল্ড বললেন, ‘না’।

এর আগেও তিনি একাধিকবার এমন ঘোষণা দিয়েছেন, ফলে দল তাকে ডেকে নিয়ে স্বাক্ষর করিয়েছে যে তাকে দলের প্রতি অনুগত থাকতে হবে। ফলে এই সপ্তাহে আবার রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। তাকে কী বলা হয়েছে সেটা কোনও পক্ষ ভাঙিয়ে বলেনি, কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে তাকে ধমক দেয়া হয়েছে দল বিরোধী অবস্থান সম্পর্কে।

এর চেয়েও তার জন্য গত সপ্তাহে ভয়াবহ ভুল এবং ভর্তুকি হয়েছে এম.এস.এন.বি.সি.র ক্রিস ম্যাথিউর সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে; ক্রিস তাকে গর্ভপাতের ব্যাপারে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে বললে তিনি বিপদটি ডেকে আনেন। গর্ভপাতের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি বললেন, যারা (যে সব মহিলারা) গর্ভপাত করায় তাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ।

এটা বলবার পর পরই তার দল থেকে এমনকি যারা গর্ভপাতের বিরুদ্ধে, রিপাবলিকান দলের তারাও বলল যে, ডোনাল্ড এই বিষয়গুলো শুধু যে জানেই না তা নয়, বোঝেও না। এমনকি তারাও, অর্থাৎ গর্ভপাত বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও কোনদিনই মনে করে না যে, গর্ভপাত করে থাকে এমন কোনো মহিলার কোনো ধরনের শাস্তি হওয়া উচিৎ। যদিও এর পর পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ওই অবস্থান পরিবর্তন করে আবার নতুন করে বিবৃতি দিয়েছেন। এই নিয়ে গত ক’দিন আমেরিকান গণমাধ্যম লেগে আছে এবং ডোনাল্ডকে এক ধরনের ঠেসে ধরেছে।

ঠিক তার পরের দিন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী উইসকন্সিনে তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে মঞ্চে উঠেছেন নারীর প্রতি তার শ্রদ্ধা দেখাবার জন্য। তার নিজ দল থেকেই সত্তর ভাগ মহিলা এখন ডোনাল্ড বিরোধী অবস্থানে, সে জরিপ প্রকাশ করে আসছে গণমাধ্যমগুলো ক্রমাগত। বিশেষজ্ঞের মতামতে এমনভাবে ব্যক্ত করা হচ্ছে যেনো এরপর ডোনাল্ডের আর তেমন কোন ভবিষ্যৎ নেই।

এছাড়া আছে তার কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য ‘ন্যাটো’ সম্পর্কে। সেটাও তার বিরুদ্ধে গেছে। গোটা ইউরোপ তাকে একজন মূর্খ বলে বিবেচনা করেছে খোলামেলা। প্রেসিডেন্ট ওবামাও এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, ডোনাল্ডের এইসব বিষয়ে কোন জ্ঞানই নেই। এর পর নিউক্লিয়ার বক্তব্যও তার নির্বুদ্ধিতাকে আরও বেশি নিশ্চিত করেছে! এর উপর তার ক্যাম্পেইন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে এক মহিলা রিপোর্টারকে শারীরিক নির্যাতনের (ব্যাটারি চার্য) অভিযোগে ফ্লোরিডা কোর্টে মামলা।

দিন যত ঘনিয়ে আসছে ডোনাল্ড তত অবাক হচ্ছেন এ কথা জেনে যে, কীভাবে তিনি যেমন চাইছেন দলের মনোনয়ন অনেকটা ‘ডাকাতি’ (এ ক্ষেত্রে হাইজ্যাক শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে) করে নিয়ে নেবেন; তা কঠিন হয়ে উঠছে তার জন্য। যেমন ধরা যাক – তিনি যখন গত সপ্তাহে বললেন, দলের প্রতি তিনি বিশ্বস্ত না-ও থাকতে পারেন। তখনই জানলেন, তিনি সাউথ ক্যারোলিনাতে যে ৯৯ জন প্রতিনিধি পেয়েছিলেন সেই প্রতিনিধিরা আর তার থাকছে না। কেননা ওই স্টেটের রিপাবলিকান নিয়ম হচ্ছে, প্রার্থী যদি দলের প্রতি বিশ্বস্ত না থাকে তবে তার ভাগে আর কোনো প্রতিনিধি থাকবে না।

সামনে আসছে চারটি স্টেটের নির্বাচনে, এমনকি তিনি জয়ী হলেও প্রতিনিধিরা চাইলে তার বিপক্ষেও যেতে পারবে। এদেরকে বলা হয়ে থাকে ‘আনবাউন্ড-ডেলিগেট’। অর্থাৎ ওই সব ডেলিগেটদের কে পেলো নির্বাচনে সেটা বড় কথা নয়, তারা কাকে সমর্থন করলো সেটা বড় কথা। সেই অর্থে ওইসব প্রতিনিধিরা সাধারণত দলের কথা শুনে থাকে। অর্থাৎ দল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ডোনাল্ড তাদের লোক নয়। ওই সংখ্যা প্রায় চারশো। অর্থাৎ ওই চারশো আর ডোনাল্ডের খাতে নেই তা তিনি জানেন এখন।

তিনি এরকম করে এই সপ্তাহেই জেনেছেন, লুইজিয়ানা স্টেটে তিনি জিতলেও প্রতিনিধি সংখ্যা বেশি ভাগে পড়েছে টেডের পক্ষে। কার্যত এইভাবে দলের আইন-কানুন সাজানো যাতে রাতারাতি বহিরাগত কেউ দলকে ব্যবহার করে মনোনয়ন না নিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের জন্য একজন ভৌতিক প্রার্থী। এছাড়া আমেরিকান নির্বাচনী ইতিহাসে ডোনাল্ড যদি রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হয় তবে এর আগে আর এই পরিমাণ নেতিবাচক সংখ্যা নিয়ে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে নামেনি। নির্বাচনের ফলাফল তো পরাজয় সে অবস্থায় তা নিশ্চিত।

মঙ্গলবার উইসকন্সিনে নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী টেড প্রায় দশ সংখ্যায় বেশি আছেন জরিপে। অনেকদিন পর এই প্রথমবার কোনো জরিপে ডোনাল্ডকে দেখা যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে নিচে।

দিন যত যাচ্ছে তত বেশি পরিষ্কার হচ্ছে ডোনাল্ড, এমনকি সর্বাধিক প্রতিনিধি পেলেও দলের মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যাকে বলে এক ধরনের পতনোন্মুখ ধস শুরু হয়েছে যেনো ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য।