চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভ্যাট বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব কী অর্থনীতিতে পড়বে না

আগামী ১ জুলাই থেকে সরকার ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের খড়গ বসাতে যাচ্ছে। এর ফলে বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে। এই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ব্যবসায়ী বা যিনি পণ্য বিক্রি করবেন তার জন্য কোনো সমস্যা নয়, কয়েক হাত ঘুরে যখন পণ্যটি ভোক্তার হাতে পৌঁছে তখন সেই করের বোঝা তাকেই পরিশোধ করতে হবে। সুতরাং যত কষ্ট বা দুর্ভোগ সেটা আমজনতার, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর এসে পড়বে।

সহজভাবে যতটুকু বুঝি, একটি পণ্যের আমদানী বা উৎপাদন মূল্য যদি একশ’ টাকা হয়, সেটা বাজারে আশার আগেই একশ’ পনের টাকা হয়ে আসবে। তারপর ডিলার বা এজেন্ট সেটা কিনবে একশ’ বত্রিশ টাকা পঁচিশ পয়সা দিয়ে। সেই ডিলারদের কাছ থেকে পাড়া বা মহল্লার বড় দোকানদাররা কিনে আনবেন একশ’ একান্ন বা বায়ান্ন টাকা দিয়ে। আর সেই পন্যটি আমরা যখন কিনতে যাব তার ওপরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে তখন মূল্য পড়বে একশ পঁচাত্তর টাকা দিয়ে।

এর মানে কি দাড়াল? আমাদের হাত পর্যন্ত আসতে যতগুলো স্তর পার হয়ে এল তাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা তো টাকাটা পেয়েই যাচ্ছে। তাদের সবার টাকা যোগ করে যে টাকা যোগ হল পণ্যের মূল দামের ওপর, সেই টাকা গেল আমাদের কাছ থেকেই। তা হলে কি এটাকে খড়গ বললে অত্যুক্তি করা হবে?

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই মূল্য সংযোজন কর সবচেয়ে বেশি। আমাদের পাশের দেশ ভারতে মূসক হার সাড়ে ১২ শতাংশ। নেপালে ১৩ শতাংশ। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে ১০ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা এ ১৫ শতাংশ মূসক কমিয়ে ৭ অথবা ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রয়োজনে তারা আন্দোলনের জন্য রাজপথে নামার হুমকিও দিয়েছেন। কিন্তু সরকার অনড়। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আন্দোলন করেন, কিচ্ছু হবে না, যদি আপনারা আন্দোলন করেন, আমরা আন্দোলন দমন করব।

এই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপিত হলে ভোজ্যতেল, চিনি, তৈরি পোশাকসহ নানা ধরণের ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। ফলে দুর্ভোগে পড়বে নিম্নবিত্ত।

বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থেই মূল্য সংযোজন কর ক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন সেটা হচ্ছে এরকম- এক হাজার টাকার জিনিস কিনলে ৪ শতাংশ হারে চল্লিশ টাকা মূসক নিয়ে থাকেন। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সেটি বেড়ে হবে ১৫০ টাকা। এর ফলে হয়ত কেনাকাটাও কমে যাবে।

এই মূসক আইন পাশ হলে বেড়ে যাবে বিদ্যুতের দাম। এমনিতেই এই সরকারের আমলে ম্যারাথন দৌড়ের মত দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তার ওপর এবার ১৫ শতাংশ বেড়ে গেলে কি হবে ভাবা যায়?

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেছেন, নতুন মূসক আইন বাস্তবায়িত হলে পণ্যের দাম শুরুতেই বেড়ে যাবে, যা ভোক্তাকে বেশ ভোগাবে। মূসকের জন্য বাড়তি টাকা দিতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি হবে। ১৫ শতাংশ মূসক একটু বেশি। এটা ১০ শতাংশ করা উচিত।

একটি দেশের উন্নয়ন এবং সবদিক থেকে সয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে মূসক অবশ্যই জনগণ দিবে। এক্ষেত্রে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু মূসক বাড়ানোর একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে। যাতে করে ভোক্তার ওপর হঠাৎ খড়গ নেমে না আসে। যতটা সহনীয় মাত্রায় ধাপে ধাপে সেটা বাড়ানো যায় তাতেই মঙ্গল সবদিক থেকে। তা না করে যদি একলাফে ১৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়, তা হলে তো জুলুমের পর্যায়েই চলে যায়।

আমাদের আশা, সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে, যাতে করে মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে না হয়।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)