চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ভেঙ্গে পড়ছে ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্য, উদাসীন প্রশাসন

বিশ্বে বাঙালি একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে প্রাণ। বাঙালি হিসেবে এটা যেমন গর্বের তেমনি যাদের জন্য এই অর্জন তাদের যথাযথ সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বুকে বুলেট পেতে নিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ আরো অনেকেই। তাদের মহান এ আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ ও জাদুঘর।

ভাষা শহীদদের স্মরণে যেসকল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্য। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ধারণ করা এই ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে একটু সামনে এগোলেই চোখে পড়ে এই ভাস্কর্যটি। ভাস্কর্যটির স্থপতি শিল্পী জাহানারা পারভীন। ১৯৯১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ এই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রায় ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়িত হয়নি নকশানুযায়ী পুরো প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আর্থিক সংকটকেই দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান সড়ক ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে অবস্থিত এই ভাস্কর্যটি দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ক্যাম্পাসে ভিড় জমায়। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা, সুষ্ঠু তদারকি আর সংস্কারের অভাবে এখন প্রায় বিলিন হতে চলেছে মহান ভাষা আন্দোলনের স্মারক এ ভাস্কর্যটি। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘যেখানে এমন একটি ভাস্কর্য পুরো জাতির জন্য গর্বের বিষয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতদিন পর্যন্ত কি কারণে এটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না তা অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার।’

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্যাওলা আর ধুলার আস্তরণে ভাস্কর্যটির প্রায় জীর্ণদশা। মূল বেদির বিভিন্ন অংশ আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যাচ্ছে। মুছে গেছে নামফলকটিও। ভাস্কর্যের আন্দোলনরত মায়ের আঁচলের অনেকাংশই খসে পড়েছে। ফলে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে এর ভেতরের রডের কাঠামো। দীর্ঘদিন রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে এর ইট-সুরকি খসে রডসহ নির্মাণ উপকরণ বেরিয়ে পড়েছে। সবকিছুই প্রশাসনের চোখের সামনে ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে রয়েছে উদাসীন। ভাস্কর্যটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে যে কোন মুহুর্তে এটি সম্পূর্ন ভেঙ্গে যাওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, শিল্পী জাহানারা পারভীন ৩৪ ফুট উচ্চতার এ ভাস্কর্যটি নির্মাণে চুনাপাথর, সিমেন্ট, ব্ল্যাক আইড, মডেলিং ক্লে প্রভৃতি ব্যবহার করেছেন। ভাস্কর্যটিতে মহান ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় চেতনাকে কংক্রিটের শরীরে জীবন্ত করেছেন তিনি। ভাস্কর্যটিতে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত প্রতিবাদী মিছিলে শত্রুর গুলিতে আহত সন্তান মায়ের কোল ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে এবং এর পেছনে শ্লোগানরত অবস্থায় একজনের প্রতিকৃতি দেখানো হয়েছে। ‘অমর একুশে’ নামের মধ্যে বায়ান্নের সেই উত্তাল সময়কে যেমন ধরে রাখা হয়েছে, তেমনি একটি শাণিত চেতনাকেও শরীরী করা হয়েছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ ভাস্কর্যটির রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দীক বলেন, ভাস্কর্যটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল। ভাস্কর্যটির মূল নকশা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। অনুদান না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অনুদান পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করা হবে।

ছবি: পিযূষ ভৌমিক