চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভালোবাসা দিবসে প্রিয় প্রজন্মের প্রতি

এ লাশ মাটির নিচে থাকবে না, জেগে উঠবে আবার। ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্ররা রাস্তায় নামলে এরশাদের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রদের মিছিলে বৃষ্টির মত গুলির বর্ষিত হয়। নিহত হন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীসহ আরো অনেকে। এটা ছিল এরশাদ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ। যদিও তৎকালীন মিথ্যা প্রেসনোটে মৃতের সংখ্যা দুইদিনে দু’তিনজন বলে উল্লেখ করেছিল। সেই সংগ্রামের সূচনা হয় এরশাদ সরকার প্রস্তাবিত মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে। একটি সাম্প্রদায়িক ও ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিয়ে দেশের শিক্ষাকে পিছিয়ে দেয়ার এই ষড়যন্ত্র ছাত্রসমাজ মেনে নিতে পারেনি। পরবর্তীকালে এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নব্বই সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়। এই আন্দোলন সংগ্রামও ছিল দেশকে ভালোবেসে। ভালোবাসার ব্যাপ্তি যখন ব্যক্তি থেকে ছড়িয়ে পড়ে আরো বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে তখন সেই ভালোবাসার রঙটাও এরকমই হয়। আজকের দিনে ভালোবাসা দিবস নিয়ে আমাদের প্রজন্ম যেমন উচ্ছ্বসিত, ততেটাই ছিল তৎকালীন প্রজন্মের দেশকে ভালোবাসার দুর্মর আকাঙ্খা। এই প্রজন্ম বা এই সময় পৃথিবী যেমন বদলে গেছে নানা রাজনৈতিক কার্যকারণে, তেমনি মূল্যবোধেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এই মূল্যবোধে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতার যেমন অভাব, তেমনি পূর্বসূরীদের ব্যর্থতাও আছে। তাই প্রজন্মের এই ভালোবাসার উম্মাদনাকে সঠিক রাজনৈতিক সচেতনতার দিকে নিয়ে যেতে পারলে আমাদের এন্টি পলিটিকস প্রজন্মের দুর্নাম ঘুচবে। কারণ প্রয়োজনে এই প্রজন্মও যে দেশের ক্রান্তিকালে দাঁড়াতে পারে সঠিক সময়ে, সেটা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে। সুতরাং যারা ভালোবাসা দিবস নিয়ে উচ্চকিত, তাদের যেমন নিরাশ করা যাবে না। আবার অতি উৎসহে ঘি ঢালার কোনো অর্থ হয় না। আমাদের পূর্বসূরীদের গৌরবগাঁথাকে যেমন ভালোবাসা শ্রদ্ধা জানাতে হবে, তেমনি এই প্রজন্মের মাঝে প্রকৃত দেশপ্রেম ছড়িয়ে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রিয় প্রজন্ম, আজ কী অবহেলায় অযত্নে পড়ে থাকা ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের শহীদ ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনিয়ার মর্মরমূর্তিতে একটি লাল গোলাপ দিয়ে ভালোবাসা জানানো যায় না?তিনি নিহত হয়েছিলেন ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রতিবাদ মিছিলে সরকারের পোষা গুণ্ডাদের গুলিতে। সুতরাং দুই দিবসকে কেন্দ্র করে বিবাদ আসলে আমাদের অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। এই বৃত্তবন্দি মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রতিরোধ দিবসের কথা তুলে ধরতে হবে, প্রচারে নিয়ে আসতে হবে। কেবল ছাত্র নয় যারা গণতন্ত্রকে ভালবাসেন, তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি আমাদের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সামনে না আনি, শহীদদের স্মরণ না করি, আমরা এই প্রজন্ম নিয়ে সামনে এগুবো কী করে। দুটি দিবসই আমাদের নিকট অর্থবহ। কারণ ভালোবাসার প্রাথমিক অর্থে ব্যক্তি কেন্দ্রিক হলেও এর রয়েছে ব্যাপক পরিব্যাপ্তি। ভালোবাসাতে জানলেই দেশকেও ভালোবাস যাবে। সুতরাং এই সময় কুতর্ক না করে দুটি দিবসকে সম মর্যাদা দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে নতুন চেতনাকে শাণিত করতে হবে।