চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বড় ও ছোট কাটরা: বইয়ে থাকলেও বাস্তবে নেই

দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নিয়ে যারা কমবেশি খোঁজ-খবর রাখেন বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাসহ যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, বড় কাটরা ও ছোট কাটরার নাম শোনেননি এমন লোক পাওয়া যাবে না হয়তো। কিন্তু মুঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক স্থাপনা দুটি বইয়ে থাকলেও বাস্তবে এর ধ্বংসাবশেষের সামান্য চিহ্ন ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

বিশেষ করে ঢাকায় যারা থাকেন বা বেড়াতে আসেন বইয়ের পাতায় এতো বেশি পড়ার ফলেই হয়তো শখ জাগতে পারে স্থাপনা দুটিতে ঘুরে আসার। যদি সেই শখ চেপে বসে এবং আপনি যদি সত্যি সত্যি পুরান ঢাকার যানজট আর ঘিঞ্জি রাস্তা পেরিয়ে সেখানে যান, তবে হতাশ হয়েই ফিরতে হবে। কারণ বুড়িগঙ্গার সোয়ারী ঘাট সংলগ্ন স্থাপনা দুটি দেখার শখ দুটি ধ্বংসপ্রায় ফটক দেখেই মেটাতে হবে।

শামসুর রাহমানের ‘স্মৃতির শহর’ থেকে জানা যায়, বড় কাটরা মুঘল আমলের নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করেন আবুল কাসেম যিনি মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমে এতে শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসেবে ব্যবহার হতো।

বড় কাটরার ধ্বংসাবশেষ

এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারণে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ছাড়া আর কিছুই নেই। সেখানে গড়ে উঠেছে একটি মাদ্রাসা। আর ধ্বংসাবশেষ হিসেবে যে ফটকটি রয়েছে সেটিও দখল হয়ে গেছে পুরোপুরি। সেই ফটকের নিচে গড়ে উঠেছে খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন দোকান। ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে বড় কাটরা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানালেন।

মুনতাসির মামুনের ‘ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ বইয়ে ছোট কাটরা সম্পর্কে বলা হয়েছে ছোট কাটরা শায়েস্তা খানের আমলে তৈরি একটি ইমারত। আনুমানিক ১৬৬৩-১৬৬৪ সালের দিকে ইমারতটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং তা ১৬৭১ সালে শেষ হয়েছিল।

এটির অবস্থান ছিল বড় কাটরার পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ইমারতটি দেখতে অনেকটা বড় কাটরার মতো হলেও আকৃতিতে ছোট এবং এ কারণেই হয়তো এর নাম হয়েছিল ছোট কাটরা। তবে ইংরেজ আমলে এতে বেশ কিছু সংযোজন করা হয়েছিল।

ছোট কাটরার ধ্বংসাবশেষ

বর্তমানে ছোট কাটরা বলতে কিছুই বাকি নেই, শুধু একটি ভাঙা ইমারত ছাড়া। যা শুধু বিশাল তোরণের মতো সরু গলির উপর দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে অসংখ্য দোকান এমনভাবে ঘিরে ধরেছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানে মোগল আমলে এমন একটি স্থাপত্য ছিল।

তবে বড় কাটরা এবং ছোট কাটরা নামে সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। তাই স্থাপনা না থাকলেও সড়কের নামের মাধ্যমে বেঁচে আছে মুঘল আমলের এই ঐতিহাসিক স্থাপনা দুটির নাম।