হত্যার দুই বছরেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার ব্লগার, বিজ্ঞান লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠনের কথা থাকলেও তা হয়নি।
আদালতের পিপি মফুর আলী অভিযোগ গঠন বিষয়টিকে তার বোঝার ভুল হিসেবে স্বীকার করে বলেন, মঙ্গলবার অভিযোগ গঠন হয়নি। আমার বুঝতে ভুল হয়েছিলো। আগামী ২০ জুন অভিযোগ গঠনের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালতের পিপি মফুর আলীর বরাতে সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত ছয়জনকে অভিযুক্ত করে দেয়া অভিযোগপত্রের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির পর বিচারক আগামী ২০ জুন অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন।
মফুর আলী জানান, মঙ্গলবার তিন আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়। তারা জামিনের জন্য আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের জন্য ২০ জুন তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
এর আগে গত ৮ মে ছয়জনকে আসামি করে দেয়া চার্জশিট আদালতে গৃহীত হয়। চার্জশিটভুক্ত ৬ আসামি হচ্ছেন, আবুল হোসেন (২৫), ফয়সাল আহমদ (২৭), মামুনুর রশীদ (২৫), মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সাফিউর রহমান ফারাবী (৩০)। অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক আছেন। আর বাকি তিনজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
আগের চার্জশিটে ৫ জনকে আসামি করা হলেও সম্পূরক অভিযোগপত্রে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে উগ্রপন্থী ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবীর নাম। আর চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ফটো সাংবাদিক ইদ্রিসসহ ১০ জনকে।
এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট ৩০২ ও ৩০ ধারায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল। অভিযোগপত্রটি আদালতে উপস্থাপন করা হলে পর্যবেক্ষণ আদেশে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী ধারা যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী গত ১৮ জানুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার জিআর শাখায় জমা দেন।
২০১৫ সালের ১২ মে সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকায় নিজ বাসার অদূরে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে অনন্ত বিজয় দাশকে (৩২)।
পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লেখতেন। তার লেখা ও সম্পাদিত বিজ্ঞান-বিষয়ক বই রয়েছে। বিজ্ঞান-বিষয়ক ছোট-কাগজ ‘যুক্তি’ নামে একটি পত্রিকা নিয়মিত সম্পাদনা করতেন তিনি। সিলেটে পরিচালিত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অনন্ত বিজয়।
ঘটনার একদিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চার দুর্বৃত্তকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।