রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সমন্বিত পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরুর দিকে নিয়োগ প্রার্থীদের কষ্ট লাঘবে আশার আলো হিসেবে দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি। কারণ পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা, প্রশ্নফাঁস, হলে ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব আট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া এই পরীক্ষার মাত্র পাঁচ দিন আগে সোনালী, রূপালী এবং জনতায় সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রমে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সমন্বিত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করলে পরীক্ষার একদিন আগে বৃহস্পতিবার বিএসসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আট ব্যাংকেরই পরীক্ষা হবে। সে ঘোষণা অনুযায়ী গত ১২ জানুয়ারি বিকেলে ঢাকা সিটির ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে এখন শুধু পরীক্ষা বাতিলই করা হয়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনার কারণ অনুসন্ধান করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ প্রতিবেদন জমা দেবে। নিয়োগপ্রার্থীদের অভিযোগ এবং আন্দোলন আমলে নিয়ে অব্যবস্থাপনার বিষয় স্বীকার করে পরীক্ষা বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এই অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির বিরুদ্ধেও নিয়োগপ্রার্থীদের নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সেসব বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে জনবল সংকট থাকার পরও ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের পরীক্ষার নিয়োগ এখনও সম্পন্ন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। যাদের অব্যবস্থাপনার কারণে এই পরীক্ষা বাতিল করতে হলো এবং আগের বছরগুলোর পরীক্ষার নিয়োগ এখনও সম্পন্ন করা যায়নি, তদন্ত কমিটি সেই বিষয়গুলোও শিগগিরই যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারবে বলে আমরা মনে করি। ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ব্যাংকিং খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে উদ্যোগী হতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমরা আহ্বান জানাই।